১৮ বছরের অপেক্ষা ঘুচবে আজ

দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর ফুটবল শ্রেষ্ঠত্বের সর্বোচ্চ মাপকাঠি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ। যে শিরোপার স্বাদ মাত্র একবারই পেয়েছে বাংলাদেশ, ২০০৩ সালে, দেশের মাটিতে। এরপর কেটে গেছে ঠিক ১৮টি বছর। লম্বা এই সময়ে জাতীয় দল আর কোনো আসরের সেরা হতে পারেনি। এমনকি দেশের মাটিতে আয়োজিত বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের চারটি আসরও হতাশ করেছে।

আজ সুযোগ সেই শিরোপা আক্ষেপ ঘোচানোর। মানে গুণে কোনো দিক থেকেই সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের সঙ্গে নেপালের ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টকে মেলানো যাবে না। তারপরও আজ নেপালকে ফাইনালে হারালে অন্তত দীর্ঘদিন পর একটা আন্তর্জাতিক শিরোপা জেতা হবে বাংলাদেশের। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালায় ফাইনালটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা পৌনে ৬টায়।

ফাইনালের মঞ্চে বাংলাদেশ গিয়েছে ভাগ্যের সহায়তায়। কিরগিজস্তান অনূর্ধ্ব-২৩ দলকে তারা হারিয়েছে আত্মঘাতী গোলে। আর নেপালের বিপক্ষে ম্যাচটা শেষ হয়েছে গোলশূন্য ড্রয়ে। এর মানে ১৮০ মিনিট কোনো গোল করতে পারেননি বাংলাদেশের কোনো ফুটবলার। স্বাগতিক নেপালেরও একই দশা। তারাও কোনো গোল না করে দুই ড্রয়ে ফাইনালে এসেছে। তবে গ্রুপের দু’টি ম্যাচ নেপাল খেলেছে প্রাধান্য বিস্তার করে। গোল ছাড়া প্রায় সব কিছুই করেছে দলটি। দু’ম্যাচেই গোলের সুযোগ তৈরিতে নেপাল এগিয়ে ছিল।

দু’দলের জন্যই তাই ফাইনালটা গোল খরা কাটানোর মঞ্চ। আর এক্ষেত্রে নেপালকে এগিয়ে রাখতে হচ্ছে। দু’দলের শনিবারের ম্যাচে যে কোনো সময় গোল পেতে পারত নেপাল। অন্যদিকে ইংলিশ কোচ জেমি ডে’র অতিমাত্রার গবেষণায় বাংলাদেশের অ্যাটাকাররা আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনার যথেষ্ট সময়ই পাচ্ছেন না। জেমি গোটা টুর্নামেন্টটাকেই নিয়েছেন জুনের বাছাইপর্বের আগে দল গঠনের জন্য গবেষণাগার হিসেবে। স্কোয়াডের সবাইকে খেলার সুযোগ দেওয়াই তার প্রথম উদ্দেশ্য। সেটা করতে গিয়ে স্ট্রাইকাররাও থিতু হওয়ার সময় পাচ্ছেন না। এই যেমন কিরগিজদের বিপক্ষে খেলারই সুযোগ পাননি দুই ফরোয়ার্ড সুমন রেজা ও মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ। নেপালের বিপক্ষে পুরো ম্যাচটাই বেঞ্চ থেকে দেখতে হয়েছে স্ট্রাইকার মতিন মিয়াকে।

জেমি ডে অবশ্য তার একই অবস্থানে অনড় আছেন। ফাইনালের আগেও কোচ শিরোপা ভাবনাটাকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন না, ‘আমি মোটেই শিরোপা নিয়ে চিন্তিত নই। সেটা জিততে পারলে দারুণ হবে। সেটা যদি নাও হয়, যে লক্ষ্য নিয়ে নেপালে এসেছিলাম, সেটা পূরণ করার সন্তুষ্টি নিয়েই ফিরব।’ আগের দু’ম্যাচে গোলকিপার আশরাফুল ইসলাম রানা ও তরুণ ফরোয়ার্ড মোহাম্মদ জুয়েলকে ছাড়া দলের সবাইকেই খেলার সুযোগ করে দিয়েছেন কোচ। দু’ম্যাচে পাঁচজনকে দিয়েছেন অভিষেকের সুযোগ।

ফাইনালেও বজায় থাকবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা, ‘ফল নিয়ে না ভেবে আমি এখানে দলের সবাইকে সমান ম্যাচ খেলার সুযোগ দিতে চাই, যাতে তারা জুনের বাছাইয়ের জন্য প্রস্তুত হতে পারে।’ আগের দু’ম্যাচে দল গোল না পাওয়াটা ভাবালেও জেমি খুশি দু’ম্যাচে গোল হজম করতে না হওয়ায়, ‘গোল মিসের সমস্যাটা কেবল আমাদের নয়, গোটা দক্ষিণ এশিয়ার দলগুলোর একই অবস্থা। স্থানীয় লিগে তারা পর্যাপ্ত গেম টাইম পায় না বিদেশিদের কারণে। তবে আমি খুশি যে শেষ দুই ম্যাচে একটি গোলও হজম করেনি দল। সবচেয়ে বড় ব্যাপার খেলোয়াড়দের মধ্যে চেষ্টার কমতি দেখিনি।’

জেমি ডে’র শিরোপা ভাবনা না থাকলেও নেপালে দলের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে শিরোপার কথা বলে এসেছেন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। তার কথার উদ্ধৃতি দিয়ে স্ট্রাইকার সুমন রেজা বলেছেন, ‘বাফুফে সভাপতি আমাদের অনেক অনুপ্রাণিত করেছেন। বলেছেন শিরোপাটা যাতে জিতে দেশে ফিরতে পারি। আমরা আমাদের সর্বোচ্চটা দিয়ে চেষ্টা করব দেশকে একটা সাফল্য এনে দিতে। গত ম্যাচে খেলার সুযোগ পেয়েও গোল করতে পারিনি। ফাইনালে গোল করে সেই কষ্টটা ভুলতে চাই।’এই শিরোপা জিতলে রাজ্য জয় হবে না, এটা সবাই জানে। তারপরও ১৮ বছর কোনো কিছু না পাওয়ার হতাশা তো এই শিরোপা কিছুটা হলেও ভোলাতে পারে। কোচ যাই বলুক, জামাল ভুঁইয়ারা নিশ্চয় সেই স্বপ্ন হৃদয়ে বুনেই আজ মাঠে নামবেন।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন