শিক্ষার্থীদের স্কুলে ফেরাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার : প্রধানমন্ত্রী

শিশুরা যাতে আবার তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে আসতে পারে এবং তাদের শিক্ষা কার্যক্রম স্বাভাবিকভাবে পুনরায় শুরু করতে পারে সে জন্য সরকার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আমরা আশা করি ভবিষ্যতে ভালো দিন আসতে পারে, আমাদের শিশুরা তাদের স্কুলে যেতে সক্ষম হবে, তারা স্বাভাবিকভাবে তাদের পড়াশোনা শুরু করবে। আমরা সে লক্ষ্যে প্রস্তুতি নিচ্ছি। রবিবার গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে মিরপুর সেনানিবাসের জাতীয় প্রতিরক্ষা কলেজে ন্যাশনাল ডিফেন্স কোর্স-২০২০ এবং আর্মড ফোর্সেস ওয়ার কোর্স-২০২০ এর গ্রাজুয়েশন সেরিমনিতে অংশ নিয়ে এসব কথা বলেন তিনি।

শেখ হাসিনা বলেন, সরকার কভিড-১৯ এর জন্য স্কুল খুলতে পারছে না এবং অনলাইন ও টেলিভিশনের মাধ্যমে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। সর্বোপরি, শিশুরা যদি তাদের স্কুলে যেতে না পারে, তবে এটি তাদের ওপর মানসিক চাপ তৈরি করে। এই প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, সরকার যখন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল, তখনই করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। তিনি আবারও করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুসরণ করার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান। গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর ১৭ মার্চ থেকে স্কুল-কলেজসহ সব ধরনের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিশ্বব্যাপী মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়া করোনার কারণে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছুটি ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে অনলাইনে ক্লাস চলছে। তা ছাড়া চলতি বছরের এইচএসসি ও সমমান, প্রাথমিক সমাপনী ও সমমান এবং জেএসসি ও সমমান পরীক্ষা বাতিল করে সরকার। বর্তমানে অফিস-আদালতের কার্যক্রম ধীরে ধীরে চালু হয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো এখনো খুলে দেওয়া হয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর একটা কথা মনে রাখতে হবে যে, মহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে এই বাহিনী গড়ে উঠেছে। কাজেই এই বাহিনীর প্রতিটি সদস্য দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে নিজেদের আপনারা গড়ে তুলবেন, যেন সব সময় জনগণের পাশে থেকে জনগণের কল্যাণে কাজ করেন। কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা মানুষের পাশে দাঁড়ানোয় তাদের ধন্যবাদও জানান প্রধানমন্ত্রী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পররাষ্ট্রনীতি মেনে বাংলাদেশ চলছে উল্লেখ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেছি। সব থেকে বড় কথা আমার দেশের উন্নতি করতে হবে, তার জন্য বিনিয়োগ প্রয়োজন। বাংলাদেশের উন্নয়নের জন্য সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখে যেখানে যতটুকু সহযোগিতা পাওয়া যায় এবং যাদের কাছ থেকে যতটুকু প্রযুক্তিজ্ঞান পাওয়া যায়, সেইটুকু নিয়েই আমরা আমাদের দেশকে গড়ে তোলার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এই কথাটা আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে, সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক আমরা রাখব। আমরা যুদ্ধ চাই না, আমরা শান্তি চাই। কিন্তু কেউ যদি আমার সার্বভৌমত্বে আঘাত করতে আসে প্রতিঘাত করবার মতো সক্ষমতা যেন আমরা অর্জন করতে পারি, সেভাবেই আমাদের প্রশিক্ষণ এবং প্রস্তুতি থাকতে হবে। মিয়ানমার থেকে ১০ লাখের বেশি রোহিঙ্গার বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়ার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরা তাদের সঙ্গে কখনো সংঘাতে যাইনি, কিন্তু আলোচনা করে এটা সমাধান করার চেষ্টা করছি আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সবাইকে আমরা এই আহ্বান জানিয়েছি যে, এই যে বিশাল একটা বোঝা আমাদের ওপর, এটা যেন খুব দ্রুত তারা সমাধান করেন। কাজেই আমি বলব, সবসময় আমাদের নিজের দেশের নিরাপত্তা, আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী সদা প্রস্তুত থাকবে এবং আমরা সেভাবেই কাজ করে যাচ্ছি। আমরা সেটা করে যাচ্ছি বলেই আজ সারা বিশ্বে কিন্তু মর্যাদা পেয়েছি।

সশস্ত্র বাহিনীর উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে যখন আমরা সরকারে আসি তখন থেকেই যাত্রা শুরু আর ২০০৯-এ সরকার গঠনের পর থেকে এই পর্যন্ত আমরা সশস্ত্র বাহিনীর ব্যাপক উন্নয়ন সাধন করতে সক্ষম হয়েছি, যা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সুখ্যাতি পাচ্ছে। তাছাড়া জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনে আমাদের সশস্ত্র বাহিনী অবদান রেখে যাচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীকে সব সময় একটি আধুনিক জ্ঞানসম্পন্ন এবং প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন বাহিনী হিসেবে গড়ে তোলার ইচ্ছার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী। দেশের উন্নয়নে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানানোর পাশপাশি কভিড-১৯ মহামারী মোকাবিলায় সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথাও তুলে ধরেন তিনি। মহামারীর মধ্যে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত হলেও এ সময়ে অনলাইনে সব কাজ করা সম্ভব হচ্ছে বলে উন্নয়নের গতি অব্যাহত রাখতে সরকার সক্ষম হয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন