পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে তৎপর বাংলাদেশ ব্যাংক

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে প্রতিটি তফসিলি ব্যাংককে ২০০ কোটি টাকা করে বিশেষ তহবিল গঠনের সুযোগ দিয়েছিল বাংলাদেশ ব্যাংক। এজন্য স্বল্প সুদে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে অর্থ নেয়ার বিশেষ নীতিমালাও প্রকাশ করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত অধিকাংশ ব্যাংকই তহবিল সংগ্রহের বিষয়ে আগ্রহ দেখায়নি। অবশ্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়াতে তত্পর রয়েছে তারা। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) পর্ষদ সদস্যরা গভর্নরের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গেলে বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।

নভেল করোনাভাইরাসের কারণে ৬৬ দিন বন্ধ ছিল দেশের পুঁজিবাজারের লেনদেন। এ সময়ে বন্ধ ছিল দেশের সব ব্রোকারেজ হাউজও। এতে ক্ষতিগ্রস্ত ব্রোকারেজ হাউজগুলো কর্মীদের বেতন-ভাতাও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারেনি। ব্রোকারেজ হাউজের কর্মীদের বকেয়া বেতন পরিশোধ ও পরিচালন ব্যয় নির্বাহ করার জন্য সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ঋণসহায়তা চেয়েছিল ডিএসই ব্রোকারেজ অ্যাসোসিয়েশন (ডিবিএ)। গতকালের সভায় ডিএসইর পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বিষয়টি তুলে ধরা হয়। এর জবাবে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ দেয়ার খাতগুলো সরকার নির্ধারণ করে দিয়েছে। ডিএসই এ দাবি অর্থ মন্ত্রণালয় ও সরকারের কাছে জানাতে পারে। সরকার যদি ব্রোকারেজ হাউজকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় আনার নির্দেশনা দেয়, তাহলে বাংলাদেশ ব্যাংক সঙ্গে সঙ্গেই তা বাস্তবায়ন করবে।

সভায় বাংলাদেশ ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, পুঁজিবাজারে ব্যাংকগুলোর বিনিয়োগ বাড়াতে বাংলাদেশ ব্যাংক তত্পরতা বাড়িয়েছে। বেশকিছু ব্যাংককে সাম্প্রতিক সময়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। বাজারের ইতিবাচক ধারা ধরে রাখতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় সব সহযোগিতাই করা হবে।সভা শেষে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ছানাউল হক জানান, ডিএসইর নতুন পর্ষদ দায়িত্ব নেয়ার পর কভিড-১৯ এর কারণে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করা সম্ভব হয়নি। আজ এ সাক্ষাৎ করার সুযোগ হয়েছে।

মুদ্রানীতিতে পুঁজিবাজারবান্ধব কিছু ঘোষণা দেয়ার কারণে আমরা বাংলাদেশ ব্যাংককে ধন্যবাদ জানিয়েছি।সরকার, মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বাংলাদেশ ব্যাংক, স্টক এক্সচেঞ্জ ও স্টেকহোল্ডারদের সহযোগিতায় বর্তমানে পুঁজিবাজার একটি পর্যায়ে এসেছে। এটিকে কীভাবে স্থিতিশীল রাখা যায় সে বিষয়ে আমরা আলোচনা করেছি। পুঁজিবাজার স্থিতিশীল রাখতে অর্থবাজারের সঙ্গে একটি কার্যকর সমন্বয় থাকা প্রয়োজন। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে।

তিনি আরো বলেন, পুঁজিবাজারে সরকারের ট্রেজারি বন্ডগুলোকে লেনদেনযোগ্য করার বিষয়ে অনেকদিন থেকেই আলোচনা হচ্ছে। এ বিষয়ে আমরা অনেক দূর এগিয়েছি। বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে আমাদের কিছু কাজ বাকি ছিল, সেগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক, বিএসইসি ও স্টক এক্সচেঞ্জ মিলে একটি প্রতিবেদন চূড়ান্ত করা হয়েছে। শিগগিরই বাংলাদেশ ব্যাংক ও ডিএসইর মধ্যে একটি নন-ডিসক্লোজার এগ্রিমেন্ট (এনডিএ) স্বাক্ষরিত হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরবর্তী পর্ষদ সভায় এটি অনুমোদন হবে। এরপর আমরা পাবলিক অ্যাকসেপ্ট্যান্স টেস্ট করে এক-দেড় মাসের মধ্যেই ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করতে পারব। অল্টারনেটিভ ইনভেস্টমেন্ট বোর্ড, এসএমই প্লাটফর্ম এগুলোও আমরা টেস্ট করেছি। আশা করছি, এগুলোও দ্রুত চালু হয়ে যাবে।

পুঁজিবাজারে ব্যাংকের বিনিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, এ নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি। বাংলাদেশ ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে আমাদের সহযোগিতা দিয়ে যাবে বলে জানিয়েছে। বর্তমানে বিএসইসির সঙ্গে বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি কার্যকর সমন্বয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। আশা করি, সামনের দিনগুলোয় এটি অব্যাহত থাকবে।মোবাইল অ্যাপের ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের ওপর ফি আরোপের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। শুধু সক্রিয় ও নিষ্ক্রিয় গ্রাহকদের তথ্য আমরা জানতে চেয়েছি। যারা অ্যাপের রেজিস্ট্রেশন নিয়েও এর মাধ্যমে লেনদেন করছে না, তাদের তো এটি রেখে কোনো লাভ নেই। আমাদের গ্রাহকপ্রতি অর্থ পরিশোধ করতে হয়। তাই অ্যাপের মাধ্যমে বাজারে অংশগ্রহণ বাড়ানোর জন্য আমরা উদ্যোগ নিয়েছে। যারা অ্যাপের মাধ্যমে লেনদেন করবেন তাদেরই রেজিস্ট্রেশন থাকা উচিত বলে জানান তিনি।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন