ব্যাপক অসচেতনতার অভাবে করোনা ভাইরাসের বিস্তার ঘটছে মেহেরপুর জেলা জুড়ে। দিনদিন বেড়েই চলেছে করোনার বিস্তার। গত সপ্তাহে জেলায় মোট করোনা আক্রান্ত’র সংখ্যা ছিল ১শ’৮৯ জন বর্তমানে তা বেড়ে দাড়িয়েছে ২শ’৮১ জনে। মাত্র এক সপ্তাহের ব্যবধানে জেলায় ৯২ জন নতুন করে আক্রান্ত হয়েছে।
দেশে করোনা সংক্রমন রোধে গত এপ্রিল মাসের ১৮ তারিখ থেকে অঘোষিত লকডাউন শুরু হয়। অথচ সে সময় জেলায় কোন করোনা রোগী সনাক্ত হয়নি। এর পর থেকে প্রশাসন. পুলিশ ও স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে করোনা বিস্তার রোধ মাঠে নামেন এবং দেশের বাইরে থেকে আসা যে কোন মানুষকে ১৪ দিনের হোম কোয়ারেন্টিনে রাখার ব্যবস্থা করেন। এমনকি কারোর যদি জ্বর সর্দি কাশি দেখা দিলেও তাকে সোয়াব টেস্টের আগে থেকেই প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখতে দেখা গিয়েছে।
এছাড়াও মানুষকে ঘরে থাকার জন্য সরকারও নানান কার্যক্রম হাতে নেয়। ঘরে থাকা অবস্থায় মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদেরকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়। জনপ্রতিনিধিরা খাদ্য সহায়তা দেওয়ার পাশাপাশি মানুষকে ঘর থেকে বাইরে না আসার জন্য বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়। মাস্ক বিতরণের মতো কার্যক্রমও চলতে থাকে। কিন্তু বর্তমানে সে কার্যক্রমও আর চোখে পড়েনা। চলতি বছরের মার্চ মাসে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার গাড়াডোব গ্রামের রুহুল আমীন নামের একজন সর্দি কাশি জ্বর হলে তাকে এলাকাবাসি করোনা হয়েছে বলে বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রচার করে খবর পেয়ে প্রশাসন ও স্বাস্থ্য বিভাগের লোকজন তাকে করোনা নমুনা সংগ্রহ করার আগে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে মার্চের ৩১ তারিখে ভর্তি করান এবং তার নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকাতে পাঠানো হয়।
সে সময় ফলাফল না আসা পর্যন্ত তাকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছিল। এই প্রক্রিয়াকে সব মহল সাধুবাদ জানায়। অথচ বর্তমানে ঐ গ্রামেরই আবুশামা নামের বাসিন্দা সে একটি ওষুধ কোম্পানীতে চাকুরি করে সে করোনা পজেটিভ হওয়ার পরেও লোকালয়ে ঘুরছে চায়ের দোকানে মসজিদেও যাচ্ছে। স্থানীয়রা তাকে নিষেধ করলেও সে কারোর কথায় মানছেনা। হেমায়েতপুর গ্রামে কয়েকদিন আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে একজন ভ্যানচালকের মৃত্যু হয়। এরপরও সেখানে কোন স্বাস্থ্য বিধি মানার বালাই নেই বলে এলাকার কয়েকজন সচেতন ব্যাক্তি জানান। কিন্তু বর্তমানে জেলায় প্রশাসন থেকে স্বাস্থ্য বিভাগে আগের মতো তৎপরোতা চোখে পড়েনা বলে জানা যায়। যে কারণে জেলায় দ্রুত করোনা সংক্রমনের হার বাড়ছে বলে মনে করেন সচেতন মহল। তবে নিজেরা যদি সচেতন না হওয়া যায় তাহলে শুধু প্রশাসন আইন প্রয়োগের মাধ্যমে একটি সমাজকে পরিবর্তন করা সম্ভব নয় বলেও সচেতন মহল মনে করেন।
গাংনী উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এম এ খালেক বলেন, করোনা বিস্তার রোধে প্রথম দিকে প্রশাসন স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে শুরু করে পুলিশ বিভাগ জনপ্রতিনিধি এমনকি সাধারণ জনগন যেমন তৎপর ছিল তেমনটি আর চোখে পড়ছেনা বিধায় করোনা বিস্তার বাড়তে পারে। তিনি বলেন প্রশাসনও আগের চাইতে সচেতনতা অভিযান কমিয়ে দিয়েছে এটাও চোখে পড়ছে তবে আগামী কয়েকদিনের ভিতর সংশ্লিষ্ট মহলের সাথে বসে একটি কার্যকর পদক্ষেপ আবারও কিভাবে নেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করব।
জেলা প্রশাসক ড. মোহাম্মদ মুনসুর আলম খান বলেন, আসলে শুরুতে জনগন সচেতন ছিল ভয় ছিল তাদের ভয়কে কাজে লাগানো গেছে। তাছাড়া মানুষকে তো আর জেলে রাখা যায়না। সবারই জীবন জীবিকা আছে সকলকে চলতে হবে। তবে নিজেদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন করোনা আক্রান্ত রোগী নিষেধ করার পরও জনগনের মাঝে আসে তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। তবে স্বাস্থ্য বিধি বা মাস্ক ব্যবহারের জন্য প্রশাসন থেকে আগের চাইতে জোর তৎপরতা চালানো হচ্ছে বলে তিনি দাবি করেন।
বার্তা প্রেরক
এ সিদ্দিকী শাহীন
মেহেরপুর প্রতিনিধি