আন্তর্জাতিক মানের নৌপথ গড়ে তোলার কাজ চলছে : নৌ প্রতিমন্ত্রী

দেশের নৌপথকে নতুন করে গড়ে তুলতে কাজ শুরু করেছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। এরইমধ্যে এ খাতে ব্যাপক উন্নয়ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে। এগুলো বাস্তবায়ন হলে দেশের নৌপথ অত্যাধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত হবে এবং তা দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।

২০১৯ সালের ৭ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের টানা তৃতীয়বারের মতো সরকার গঠনের পর দলের এই তরুণ নেতাকে মন্ত্রী পরিষদে সদস্য করে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়।
দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিকনির্দেশনায় নৌ সেক্টরের আধুনিকায়নে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়। সরকারের নেওয়া এসব পদক্ষেপের বেশকিছু ইতোমধ্যেই বাস্তবায়ন হয়েছে। ফলে নৌ সেক্টরে উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়েছে।

সম্প্রতি দেওয়া একান্ত সাক্ষাতকারে এসব ব্যাপারে বিস্তারিত তুলে ধরেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী।

প্রতিমন্ত্রী বলেন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। দেশের এই পরিচয় বজায় রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বর্তমানে আমরা নদী ও নৌপথ সচল ও আধুনিকায়ন করে গড়ে তোলার কাজ করে যাচ্ছি। শুধু সচলই নয়, একটি নিরাপদ নৌপথ গড়ে তুলতে চাই আমরা।

এ জন্য যে পরিকল্পনাগুলো হাতে নেওয়া হয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে দেশে নৌপথ দীর্ঘ ১০ কিলোমিটারে সম্প্রসারিত হবে এবং আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের নৌপথ গড়ে উঠবে। এ নৌপথ ঘিরে গড়ে উঠবে বিরাট পর্যটন শিল্প। দেশের অর্থনীতির অন্যতম সহায়ক শক্তি হবে এই নৌপথ। বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়নে তা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ইতোমধ্যে চট্রগ্রাম বন্দরের আধুনিকায়ন করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে বন্দরে আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে। বন্দরে ছয় তলা ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করে চারতলা বিশিষ্ট হাসপতাল ভবন নির্মাণাধীন। বন্দর উন্নয়নে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় আন্তর্জাতিক মানের দিক থেকে চট্টগ্রাম বন্দর বিশ্বের ৫৯তম বন্দরে উন্নীত হয়েছে।

উন্নয়ন কার্যক্রম প্রসঙ্গে তিনি আরও জানান, পতেঙ্গায় পিসিটি বাস্তবায়নের পর্যায়ে আছে। মংলা বন্দরকে আধুনিকায়নে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। বন্দরের আউট টার্মিনালে ড্রেজিংয়ের কাজ চলছে।

মাতারবাড়ি পোর্টের জন্য ১৭ হাজার কোটি টাকা একনেকে অনুমোদন হয়েছে। বে টার্মিনালের কাজ চলছে। পায়রা বন্দরের ফাস্ট টার্মিনালের কাজ হাতে নেওয়া হয়েছে, কিছুদিনের মধ্যেই টেন্ডার হবে। কোল জেটির টেন্ডার হয়েছে, কাজ শুরু হবে।

নদী বন্দরগুলোর আধুনিকায়নে নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ ও তা বাস্তবায়নের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে খালিদ মাহমুদ বলেন, নদী বন্দরগুলোও আধুনিকায়নের কাজ চলছে।

নদী বন্দরগুলোর জন্য আরও পন্টুন তৈরি করা হচ্ছে। বরিশাল নদী বন্দরের আধুনিকায়নের কাজ চলছে। ঢাকা, নোয়াপাড়া, ভৈরব, আশুগঞ্জেও পন্টুন স্থাপনের কাজ চলছে। বিভিন্ন পদক্ষপ বাস্তবায়নের ফলে বন্দরগুলো অনেক বেশি সক্ষমতা অর্জন করেছে। বন্দরগুলোতে অনেক আধুনিক যন্ত্রপাতি স্থাপন করা হয়েছে।

‘ট্রেনিং ইনস্টিটিউট স্থাপন এবং সেগুলোতে ট্র্রেনিং রোট দেওয়া হয়েছে। মাদারীপুরে ন্যাশনাল মেরিটাইম ইনস্টিটিউশন স্থাপন করা হচ্ছে। আরও চারটি মেরিন একাডেমি নির্মাণ করা হবে।

৫৩টি নদী খনন চলমান রয়েছে। বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, বালু নদীর খনন কাজ চলছে। পুরাতন ব্রক্ষ্মপুত্র, ধরলা, তুলসি, পুনভর্বা নদী খনন করা হচ্ছে। শেখ হাসিনার স্বপ্ন আধুনিক নৌপথ বাস্তবায়নে আইডব্লিউটিএর মাধ্যমে ড্রেজার এবং বিআইডব্লিউটিসির মাধ্যমে জলযান সংগ্রহ করা হয়েছে। উদ্ধারকারী জাহাজ আনা হয়েছে।’

আন্তর্জাতিক নৌ রুট সম্প্রসারণের কথা তুলে ধরে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ভারতের সঙ্গে যে নৌ রুট চালু আছে সেটাকে নেপাল, ভুটান পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। গোমতি নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা হবে। যাত্রী সাধারণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য বন্দরগুলোতে স্ক্যানার বসানো হয়েছে।

স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করার জন্য স্যানিটাইজার টানেল স্থাপন করা হয়েছে। নিরাপদ নৌ চলাচল নিশ্চিত করতে বাতিঘর আইন করা হয়েছে। নৌ সেক্টরকে আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানের করে তুলতে প্রয়োজনীয় বাকি সব পদক্ষেপও নেওয়া হবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন