প্রাণঘাতি করোনার আক্রমণে মানবদেহে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয় ফুসফুস। ভাইরাসটি মানুষের ফুসফুসের টিস্যুকে ধ্বংস করে। এতে শ্বাসতন্ত্রে তৈরি হয় প্রদাহ, বাড়তে থাকে শ্বাসকষ্ট। করোনাকালে তাই ফুসফুসকে সবল ও সক্রিয় রাখার প্রতি নজর দেয়া জরুরি।
ধূমপান না করা, ব্যায়াম করা, বায়ুদূষণ এড়িয়ে যাওয়া ইত্যাদি ফসুফুসকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে।পাশপাশি ফুসফুসকে সুস্থ রাখার ভালো উপায় হচ্ছে নিয়মিত শরীরচর্চা করা ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া। স্বাস্থ্যকর খাবার অসুস্থতা থেকে সুরক্ষিত রাখে ও জীবনের আয়ু বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।
ফুসফুসকে সক্রিয় ও কার্যক্ষম রাখতে সাহায্য করে এমন কিছু খাবারের কথা জানিয়েছে স্বাস্থ্যবিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথ ডটকম।
আপেল : আপেল খাওয়ার অনেক উপকারিতা রয়েছে। যুক্তরাজ্যের এক গবেষণায় বলা হয়, সপ্তাহে যারা দুটি থেকে পাঁচটি আপেল খায়, তাদের অ্যাজমা হওয়ার ঝুঁকি ৩২ ভাগ কমে যায়। আপেলের মধ্যে রয়েছে ফ্লাবোনয়েড। এটি শ্বাস নেওয়ার পথকে পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে, ফুসফুসকে ভালো রাখে।
গাজর: গাজর বেটা ক্যারোটিন এবং অন্যান্য অ্যান্টি অক্সিডেন্টের জন্য প্রসিদ্ধ। গবেষণায় বলা হয়, বেটা ক্যারোটিন শরীরে গিয়ে ভিটামিন ‘এ’ তে রূপান্তরিত হয়। ফুসফুস ভালো রাখতে গাজর একটি চমৎকার খাবার।
আদা: আদা কেবলই প্রদাহনাশক নয়, এটি বিষমুক্তকরণে সহায়তা করে এবং ফুসফুস থেকে দূষণকারী পদার্থ দূর করে। আদা শ্বাসতন্ত্রের বদ্ধতা দূর করে, বায়ুপথগুলোকে খুলে দেয় ও ফুসফুসে সঞ্চালন বৃদ্ধি করে- এভাবে ফুসফুস অনাকাঙ্ক্ষিত বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়।
রসুন: রসুনে উপস্থিত ফ্লেভোনয়েড গ্লুটাথিয়োন উৎপাদনে উদ্দীপ্ত করে, যা বিষাক্ত পদার্থ ও কার্সিনোজেন দূর করে। এর ফলে ফুসফুসের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি পায়।
ঝালমরিচ: ঝালমরিচের ক্যাপসাইসিন শ্লেষ্মা নিঃসরণে উদ্দীপ্ত করে এবং শ্লৈষ্মিক ঝিল্লিকে সুরক্ষা দেয়। ঝালমরিচের চা পান করতে পারলে সবচেয়ে ভালো, এটাও বিটা-ক্যারোটিনের আরেকটি ভালো উৎস। বিটা-ক্যারোটিন অ্যাজমার অনেক উপসর্গ প্রশমিত করতে পারে।
হলুদ: হলুদে প্রদাহনাশক উপাদান রয়েছে, অর্থাৎ এটি প্রদাহ কমাতে পারে। এর জন্য ধন্যবাদ পাবে এ মসলাতে বিদ্যমান কারকুমিন। এ উপাদানটি বায়ুপথের প্রদাহ ও অ্যাজমার সঙ্গে সম্পৃক্ত বুকের টানটান ভাব কমিয়ে ফেলে।
বাদাম ও বীজ জাতীয় সবজি: বাদাম ও বীজ জাতীয় সবজি ফুসফুসের জন্য খুবই উপকারী। আখরোট, পেস্তাবাদাম কাজুবাদাম, চিনাবাদাম, মিষ্টি কুমড়ার বীজ, সূর্যমুখীর বীজ, ফ্ল্যাক্সসিডে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেশিয়াম, প্রয়োজনীয় খনিজ থাকায় এ গুলো শ্বাসতন্ত্র ভালো রাখে।
গ্রিন টি: গ্রিন টি শরীরের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফুসফুসের প্রদাহ কমায় ও কার্যকারিতা বাড়ায়। ২০১৭ সালে কোরিয়ান এক গবেষণা থেকে জানা গেছে, যারা নিয়মিত দুই কাপ গ্রিন টি পান করেন, তাদের ফুসফুসের কার্যকারিতা বাড়ে।
কফি: কতটুকু পরিমাণ কফি পান শরীরের জন্য ভালো- এ নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। তবে কফি কিন্তু ফুসফুস ভালো রাখতে সাহায্য করে, বিশেষ করে ব্ল্যাক কফি। কফি পানের চার ঘণ্টা পর শ্বাসতন্ত্রের কার্যক্রম আরো ভালো হয়। তাই ফুসফুস সুরক্ষিত রাখতে এই কফি পান করতে পারেন।
পানি: পানির চেয়ে অধিক ভালো ও অধিক কার্যকর আর কি হতে পারে? শরীর বিষমুক্তকরণের সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে পানি পান করা। এটা মনে রাখা ভালো যে শুষ্ক ফুসফুসে অস্বস্তি ও প্রদাহ বেশি হয়। শারীরিক পানিশূন্যতা এড়াতে প্রতিদিন ছয় থেকে আট গ্লাস পানি পান করুন।