কুয়েতে রিমান্ডে এমপি পাপুল, ‘জানে না’ দূতাবাস

বাংলাদেশের সংসদ সদস্য কাজী শহিদ ইসলাম পাপুলকে মানবপাচার ও অর্থপাচারের অপরাধে কুয়েত সরকার গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিয়েছে। রিমান্ডে তাকে জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য নিয়ে প্রতিদিন দেশটির গণমাধ্যমে খবর আসছে। তবে এখনো এ বিষয়ে ‘জানে না’ বলছে কুয়েতে বাংলাদেশ দূতাবাস।

দেশটির পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি বলে জানিয়েছেন কুয়েতে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত এস এম আবুল কালাম।

গত ৬ জুন কুয়েতের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সদস্যরা দেশটির মুশরেফ আবাসিক এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেফতার করে। তখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। তবে কুয়েত সরকারের পক্ষ থেকে কিছু জানানো হয়নি। সেদিনই দূতাবাস কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে চেয়ে চিঠি দেয়।

রাষ্ট্রদূত আবুল কালাম বলেন, প্রথম চিঠির উত্তর না পেয়ে আমরা আরও কয়েক দফা চিঠি দিলেও একটারও উত্তর পাইনি। তাই এমপি শহিদ ইসলামের সঙ্গে কী ঘটেছে সেটা এখনই বলতে পারছি না।

দেশটির গণমাধ্যম বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রতিদিন খবর প্রকাশ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, নানা রকম খবর মিডিয়াতে পাচ্ছি। তবে আমরা কুয়েতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি।

তিনি বলেন, করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতির কারণে দেশটির সবকিছু এখনো প্রায় বন্ধ। তাছাড়া জানানোর মতো কিছু নেই বলেও হয়তো তারা জানাচ্ছে না।

কুয়েত টাইমস জানায়, পাপুল মানবপাচার ও অর্থপাচারের কাজ অব্যাহত রাখতে কুয়েত সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কর্তা-ব্যক্তিদের ঘুষ দিতেন। সম্প্রতি তিনি কুয়েতের ব্যাংক হিসাব থেকে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে বিপুল অঙ্কের অর্থ স্থানান্তরের কথা তদন্ত কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। এমনকি ঘুষ গ্রহণকারীদের নামও জানিয়েছেন পাপুল।

এদের একজন কুয়েতের একটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তি, একজন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক আমলা, আর শেষজন দেশটির জনৈক নাগরিক। আর পাপুলকে মদদ দিয়েছেন দেশটির অন্তত সাতজন বিশিষ্ট নাগরিক। ওই সাতজনের মধ্যে কুয়েতের সাবেক ও বর্তমান তিন এমপিও রয়েছেন।

প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতে মানবপাচার নিয়ে বাংলাদেশের এমপির বিরুদ্ধে পাবলিক প্রসিকিউশন যে তদন্ত চালাচ্ছে, তা নিয়ে পরের ধাপের তদন্ত চালাবে দেশটির দুর্নীতি দমন কর্তৃপক্ষ।

আরব টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়, কুয়েতের এক মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত ওই কর্মকর্তা পাপুলের মালিকানাধীন ক্লিনিং কোম্পানিতে গিয়ে দেখা করেন। বৈঠকের আগে কুয়েতি কর্মীদের সরিয়ে দেয়া হয় পাপুলের অফিস থেকে। ওই কর্মকর্তা চাননি কুয়েতের স্থানীয় লোকজন তাকে চিনে ফেলুক। তাই কুয়েতি কর্মকর্তার অনুরোধে বৈঠকের আগেই এমপি পাপুল স্থানীয় কর্মীদের ছুটি দিয়ে দেন। মূলত কুয়েতের ওই কর্মকর্তা ঘুষ নেয়ার সময় কাউকে সাক্ষী রাখতে চাননি। এমপি পাপুল তাকে ১০ লাখ দিনার বা ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকার চেক এবং এক লাখ দিনার বা দুই কোটি ৭৪ লাখ টাকা নগদ দেন, যা তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। চেকের একটি কপি পাবলিক প্রসিকিউশনকে দেয়া হয়েছে। বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিকে কুয়েতে নেয়ার ব্যবস্থা করে দেয়ার শর্তে স্থানীয় এক নাগরিককে ২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা বা ১০ লাখ কুয়েতি দিনার ঘুষ দেন আটক এমপি পাপুল। এ তথ্যটিও তিনি তদন্ত কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন।

কুয়েত টাইমস জানায়, সে দেশের পার্লামেন্টের চলমান অধিবেশনে মানবপাচারের মামলার প্রসঙ্গটি আলোচনায় ওঠে।

গত রোববারের ওই আলোচনায় বেশ কয়েকজন এমপি বলেন, ভিসা বাণিজ্যের নামে বাংলাদেশের এমপির সঙ্গে মানবপাচার চক্রের মদদদাতা কুয়েতের এমপি ও সন্দেহভাজন কর্মকর্তাদের নাম প্রকাশ করা হোক। এমপি আবদুল ওয়াহাব আল বাবতেইন ওই কেলেঙ্কারিতে জড়িত ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিরও দাবি জানিয়েছেন।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন