আইসিসিকে আকরাম খানের নতুন প্রেসক্রিপশন

করোনাভাইরাস শুধু জীবনই কেড়ে নিচ্ছে না, এর ভয়াবহ রুপ থমকে দিয়েছে গোটা বিশ্বকে। জীবনের চাঁকা আছে থেমে। হাসি, বিনোদন বন্ধ। মানুষের জীবন স্থির হয়ে আছে। করোনায় সুস্থ্য বিনোদনের অন্য শাখা প্রশাখার মতো খেলাধুলাও বন্ধ।

নতুন করে শুরুর আগে কিছু বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন এবং স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জোর তাগিদ দেয়া হয়েছে। করোনার কারণে ক্রিকেটের কিছু প্রচলিত রীতি ও নিয়ম পাল্টে ৫টি নতুন নিয়ম চালু করা হয়েছে। সেগুলো হলো করোনা সাবস্টিটিউট, বলে লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় আম্পায়ার দিয়ে খেলা পরিচালনা, অতিরিক্ত রিভিউ সিস্টেমের অনুমতি এবং জার্সিতে বাড়তি লোগোর ব্যবহার।

আইসিসির এ সিদ্ধান্ত কতটা যৌক্তিক? করোনা সংক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকা এবং ভালোয় ভালোয় ম্যাচ আয়োজনে এ আইনগুলো কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে? এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ভাষ্য কী? যাদের নিরপত্তার কথা ভেবে এসব নতুন নিয়ম, সেই ক্রিকেটাররাই বা কী ভাবছেন? তাদের চিন্তা কী?

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড পরিচালক ও ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আকরাম খান আইসিসির এসব নতুন নিয়মকে যথাযথ ও সময়োচিত বলে অভিহিত করেছেন। পাশাপাশি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটি প্রধান আরও একটি তাৎপর্য্যপূর্ণ কথাও বলেছেন।

এ বিষয়ে জাগো নিউজকে আকরাম খান বলেছেন, ‘বলার অপেক্ষা রাখে না, করোনা সংক্রমণ ঠেকাতেই ক্রিকেট বলে লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আনার সিদ্ধান্ত। যেটা অত্যন্ত সময়োচিত ও যুক্তিযুক্ত। কারণ আমরা সবাই জানি, বলের ঔজ্জ্বল্য ধরে রাখতে এবং সুইং করানোর জন্য সব ফিল্ডিং সাইডই বলে লালা ব্যবহার করে আসছে। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেটা ব্যবহার অত্যন্ত ক্ষতি ও ঝুঁকির কারণ। লালা থেকে করোনা সংক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে প্রচুর। কারও করোনা পজিটিভ থাকলে বা ভেতরে করোনার ভাইরাস থাকলে ঐ লালা যুক্ত বল আরেকজনের সংস্পর্শে গেলে তারও করোনা আক্রান্তের শঙ্কা থাকবে। কাজেই আইসিসি ভেবেচিন্তে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’

বলে লালা ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা আরোপের পাশাপাশি আইসিসি আরও চারটি নতুন আইন করেছে। তার একটি হলো, ম্যাচ চলাকালীন কোন দলের খেলোয়াড়ের মধ্যে করোনা উপসর্গ দেখা দিলে তার বিকল্প খেলোয়াড় নামানো যাবে।

সেই নিয়মের প্রশংসা করে আকরাম খান বলেন, ‘এটা অবশ্যই দুরদর্শী সিদ্ধান্ত। একজন ক্রিকেটার তো আর করেনা নিয়ে মাঠে নামতে পারেন না। তাতে করে শুধু তার জীবনই বিপন্ন হবে না, তার কাছ থেকে দুই দলের বাকি ক্রিকেটার ও পুরো দলের করেনার আক্রান্তের শঙ্কাও থাকবে। তাই আইসিসি নিয়ম করেছে করোনা উপসর্গ থাকা ক্রিকেটারকে বাদ দিয়ে বিকল্প খেলোয়াড় খেলানো যাবে।’

বলে রাখা ভাল, এতকাল শুধু মাথায় বলের আঘাতে ব্যথা পাওয় ক্রিকেটারের বিকল্প খেলান যেত। এখন থেকে কোন ম্যাচে করোনা পজিটিভ ক্রিকেটারের বিকল্পও নেয়া যাবে। এ আইনকে সমর্থন করে আকরাম যোগ করেন, ‘করোনার কারণে আইসিসি যে বিকল্প ক্রিকেটার খেলানোর সুযোগ করে দিতে চাচ্ছে, সেটা অবশ্যই সমর্থনযোগ্য। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সেটা খুবই যুক্তিযুক্ত এবং সঠিক।’

কিন্তু জাতীয় দলের এ সাবেক অধিনায়ক মনে করেন, ‘করোনা পজিটিভ ক্রিকেটারের বদলে আরেকজনকে খেলার সুযোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে আইসিসির আরও সচেতন হওয়া উচিৎ ছিল। টেস্ট চলাকালীন যেকোন ধরনের ইনফেকশনে আক্রান্ত ক্রিকেটারদের বিকল্প খেলানোর আইন আরও আগেই চালু করা দরকার ছিল। কারণ ৫ দিনের টেস্ট, যে কেউ যেকোন দিন জ্বরাক্রান্ত হতে পারে। ইনফেকশনজনিত কারণে কারও আর খেলা সম্ভব নাও হতে পারে। তখন ইনফেকশনে আক্রান্ত ক্রিকেটারের পক্ষে খেলা সম্ভব হয় না। তাতে করে তার দল বিপাকে পড়ে যায়। তাদের জন্যও বিকল্প ব্যবস্থা চালু করা খুব দরকার ছিল।’

বিসিবি পরিচালকের দাবি, ‘এখন করোনার মহামারী রুপ দেখেই বিকল্প ক্রিকেটার খেলানোর নিয়ম করা হয়েছে। তবে ভাইরাস জ্বর বা ইনফেকশনে আক্রান্ত ক্রিকেটারের হয়তো মৃত্যু ঝুঁকি কম কিন্তু তার পক্ষেও তো আর খেলা সম্ভব হয় না। কাজেই জ্বর ও ইনফেকশনে আক্রান্ত ক্রিকেটারের বদলে অন্য আরেকজনকে খেলানোর নিয়মটাও চালু করা প্রয়োজন ছিল বলে আমি মনে করি।’

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন