পশ্চিমাকাশে সূর্য ডুবে গেছে। হিসেবে এখন চাঁদরাত। অন্য সময় এখন বিপণীবিতানগুলোতে থাকে উপচে পড়া ভিড়। নাড়ির টানে ঘরে ফেরা মানুষগুলো প্রিয়জনের পাশে বসে পবিত্র রমজান মাসের শেষ ইফতার করছেন। আরও অনেকে পথে বসে প্রতীক্ষা করছেন কতক্ষণে মায়ের পা ছুঁয়ে দোয়া নেবেন তার।
এসবের জন্য দায়ী এক অদৃশ্য শত্রু। করোনা ভাইরাস। কোভিড ১৯। সংক্রামক এই ভাইরাসের জন্য আজ মানুষের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ। স্বাধীনতা নেই প্রিয়জনকে ছুঁয়ে দেখার। কর্মহীন কোটি মানুষ। অন্নের সন্ধানে ঘুরছেন আরও কত লাখ মানুষ।
এতসব বেদনার মধ্যে মানবজাতির স্মরণকালের সবচেয়ে বড় বিপর্যয়ের মধ্যে সোমবার (২৫ মে) বাংলাদেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল ফিতর।
দেশের আকাশে পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। সোমবার (২৫ মে) সারা দেশে পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। বিশ্বব্যাপী মহামারি করোনাভাইরাসের বিস্তারের কারণে এবার ভিন্ন মাত্রার ঈদ উদযাপিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঈদের জামাত আদায়ের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাসব্যাপী সিয়াম সাধনা শেষে প্রতিবছরই উদযাপিত হয় এই ঈদ উৎসব। এ উপলক্ষে সাধারণত তিন দিনের সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। ছুটিতে স্বজনদের সাথে ঈদ করার জন্য কয়েক দিন ধরেই নাড়ির টানে গ্রামে ছুটে যায় লাখ লাখ মানুষ। রাজধানী ঢাকা অনেকটাই ফাঁকা হয়ে যায়। কিন্তু এবার ব্যতিক্রম।
কারোনা পরিস্থিতির কারণে আগে থেকেই সাধারণ ছুটি চলছে। গণপরিবহন বন্ধ। ব্যক্তিগত গাড়িতে কিছু সংখ্যক মানুষ গ্রামের বাড়িমুখো হলেও অধিকাংশ মানুষই এবার যেতে পারছে না। করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছে। নিজ বাসাবাড়িতে অবস্থান করছে।
ঈদের শুরুটা হয় ঈদগাহে সবাই মিলে নামাজ পড়তে যাওয়ার মধ্য দিয়ে। করোনার কারণে স্মরণকালে এই প্রথম ঈদের জামাত হবে না ঈদগাহে। গত ৫০ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো জাতীয় ঈদগাহে নেই জামাতের আয়োজন। করোনার বিস্তার রোধে দেশের কোথাও এবার ঈদগাহে জামাত হবে না। মসজিদে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে জামাত করার পরামর্শ দিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়।
ইসলামিক ফাউন্ডেশন জানিয়েছে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদে ঈদের প্রধান জামাত হবে। প্রথম জামাত সকাল ৭টায় হবে। পরের জামাতগুলো হবে ৮টা, ৯টা, ১০টা এবং পৌনে ১১টায়। অন্যান্য মসজিদেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে জামাত আয়োজনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বাঙালির কাছে ঈদ শুধু আনন্দের নয়, সব ভেদাভেদ ভুলে পরম শত্রুকেও বুকে টেনে নেওয়ার দিন। কিন্তু করোনার সংকটে এখানেও বাধা রয়েছে। ঈদ জামাতের পর কোলাকুলি করা যাবে না, হাত মেলানো যাবে না।