জুনের শুরুতে ‘লকডাউন’ শিথিলের সম্ভবনা

জুনের শুরু থেকে উঠিয়ে নেওয়া হতে পারে চলমান লকডাউন পরিস্থিতি ও সাধারণ ছুটি। ঈদ পর্যন্ত করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে সরকার।

বাংলাদেশসহ বিশ্বজুড়ে প্রাণঘাতী করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) প্রাদুর্ভাবের কারণে সবকিছু স্থবির হয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণাসহ সবকিছু বন্ধ আছে। টানা প্রায় দুই মাস ‘লকডাউন’র কারণে মানুষের জীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে নিরুপায় হয়ে পড়েছে শ্রমজীবী মানুষ। এই পরিস্থিতিতে সাধারণ ছুটি দফায় দফায় বাড়ালেও ‘লকডাউন’ কিছুটা শিথিল করেছে সরকার।

সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণও বাড়ছে, আবার সব কিছু বন্ধের কারণে মানুষের জীবনও বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। বিশেষ করে শ্রমজীবী খেটে খাওয়া মানুষের জীবিকার প্রশ্ন সামনে বড় করে দেখা দিয়েছে। অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড স্থবির হয়ে পড়েছে।

প্রতিবছর জুনে পরবর্তী অর্থ বছরের জাতীয় বাজেট দেওয়া হয়। এই পরিস্থিতিতে লকডাউন চালিয়ে যাওয়া নিয়ে সরকার উভয় সংকটে পড়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে মানুষের জীবিকার জন্য কার্যক্রম সচল রাখতে ধীরে ধীরে লকডাউন শিথিল করা হয়েছে। যদিও ৩০ মে পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বাড়ানো হয়েছে। এই দফায় ছুটি শেষ হওয়ার পর জুন থেকে ছুটি ও লকডাউন তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে পারে। তবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও জনসমাগমের উপর নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে বলে তারা জানান।

যদিও সব কিছু নির্ভর করবে করোনা পরিস্থিতি কোন দিকে যায় তার উপর। এপ্রিলের শেষ এবং মে মাসের প্রথম দিকে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর সংখ্যা তুলনামুলকভাবে কম থাকায় লকডাউন শিথিল, গার্মেন্টস, মার্কেট খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমানে করোনা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই এক হাজারের উপরে নতুন আক্রান্ত হচ্ছে। সেই সঙ্গে মুত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। এই সংখ্যা আরো উর্দ্ধগতি হলে উল্টো চিন্তা-ভাবনাও করা হতে পারে। সেক্ষেত্রে মানুষের জীবন বাঁচাতে লকডাউন আরও কঠোর করা হতে পারে বলেও সরকারের ওই নীতিনির্ধারকরা জানান।

বৃহস্পতিবার (১৪ মে) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ছুটি সংক্রান্ত নির্দেশনার পর জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে চলমান ছুটি ৩০ মে পর্যন্ত বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এছাড়া স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের ১৩ দফা নির্দেশনা মেনে সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ প্রয়োজন অনুসারে খোলা রাখার নির্দেশনাও দিয়েছে সরকার। এদিকে এই সময়ের মধ্যে করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না এলে আরও ছুটি বাড়িয়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিকল্প পন্থাও চিন্তা-ভাবনা করা হতে পারে বলে সরকারের ওই নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে কথা জানা যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ঈদ পর্যন্ত পরিস্থিতি পর্যালোচনা করা হবে। সার্বিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে লকডাউন উঠানো বা না উঠানোর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ঈদ পর্যন্ত পরিস্থিতি কি হয় তার উপর সিদ্ধান্ত নির্ভর করবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, এটি নিয়ে আরও চিন্তা-ভাবনা করা হবে। আমরাও তো চাই যে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে আসুক। এ জন্য কিছু কিছু শিথিল করা হয়েছে। ঈদের পর পরিস্থিতি কি হবে সেটা দেখা হবে। তার পর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত। তবে স্কুল কলেজ খোলা, জনসমাগম এগুলো করা যাবে না।

নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সব কিছু নির্ভর করে পরিস্থিতির উপর। এই সময়ের মধ্যে পরিস্থিতি কি হয় সেটা দেখতে হবে। এ সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি আছে, পরামর্শক কমিটি আছে, তাদের সুপারিশ ও মতামতের ভিত্তিতে সরকার সিদ্ধান্ত নেবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন