বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে ১১ জুন

আগামী ১১ জুন জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশন শুরু হতে যাচ্ছে। অধিবেশন শুরুর দিনেই আসন্ন ২০২০-২১ অর্থবছরের বাজেট পেশ হবে। সাধারণত বাজেট অধিবেশন দীর্ঘ হলেও এবারের অধিবেশনে যতদূর সম্ভব সংক্ষিপ্ত হবে। করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করার চিন্তাভাবনা চলছে। সংসদ সচিবালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা গেছে, আগামী সপ্তাহের শুরুর দিকে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদ একাদশ সংসদের অষ্টম (বাজেট) আহ্বান করবেন। ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে ১১ জুন বাজেট পেশের বিষয়টি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রস্তুতি গ্রহণের জন্য গত সপ্তাহে সরকারের অর্থ বিভাগ থেকে জাতীয় সংসদ সচিবালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে।

সংসদ সচিবালয় সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাসের ঝুঁকি যতদূর সম্ভব এড়াতে আগেভাগে অধিবেশন না ডেকে বাজেট পেশের দিনই তা ডাকার ব্যাপারে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অবশ্য চলতি জাতীয় সংসদের একজন সংসদ সদস্যের মৃত্যুর কারণে রেওয়াজ অনুযায়ী প্রথম দিনের বৈঠক মুলতবি করার বিষয়টি বিবেচনা করে বাজেট পেশের আগের দিন অর্থাৎ ১০ জুন অধিবেশন ডাকার চিন্তাও করা হচ্ছে। তবে ১১ জুনই বৈঠক ডেকে শোক প্রস্তাব গ্রহণের পর কিছুক্ষণের জন্য মুলতবি করে পরে বাজেট পেশ করার ওপর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। জানা গেছে, সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সায় পেলে এ বিষয়টি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তারপর অধিবেশন আহ্বানের জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হবে।

সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সদ্য শেষ হওয়া সপ্তম অধিবেশনের মতো বাজেট অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত করার চিন্তা থাকলেও আইনগত কারণে তা সম্ভব হবে না। সংসদের কার্যপ্রণালী বিধি অনুযায়ী সংসদে উপস্থাপিত চলতি অর্থবছরের সম্পূরক বাজেট এবং আগামী অর্থবছরের বাজেটের ওপর জাতীয় সংসদে সাধারণ আলোচনার বিধান রয়েছে। ফলে আলোচনা না করে বাজেট পাস হলে তা আইনি ব্যত্যয় হবে। যার কারণে যতদূর সম্ভব কম সময় আলোচনা করে বাজেট পাস করা হবে। বিগত বাজেট অধিবেশনগুলো পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, ৪০ থেকে ৬০ ঘণ্টা আলোচনা হয়েছে। তবে এবারের বাজেট আলোচনা হবে খুবই সংক্ষিপ্ত। এক্ষেত্রে তা পাঁচ থেকে দশ ঘণ্টার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা হতে পারে। অবশ্য সংসদ কক্ষের পরিবর্তে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে অনলাইন ভিত্তিক অধিবেশন চালানোর বিষয়টিও চিন্তা করা হচ্ছে। আইনে কোনও বাধা না থাকলে এ বিষয়টিকে বিবেচনা করা হবে। এটা সম্ভব হলে বাজেটের ওপর আলোচনার সময় কিছুটা বাড়তে পারে।

সংসদ সূত্রে জানা গেছে, সপ্তম অধিবেশনের মতো বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ পরিস্থিতি ক্রমশ অবনতি এবং সংসদ এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শতাধিক সদস্য ইতোমধ্যে করোনা পজিটিভ হাওয়ায় বাজেট অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা নিয়ে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবন কেন্দ্রীয়ভাবে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হাওয়ায় করোনা সংক্রমণের বেশি ঝুঁকির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে অধিবেশন কক্ষ পুরোটাই বায়ু প্রতিরোধী (এয়ারটাইট) ও শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত হওয়ার কারণে উদ্বেগ আরও বেড়েছে। প্রসঙ্গত, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে শীততাপ নিয়ন্ত্রণ যন্ত্রের মাধ্যমে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে বেশি।

এবারের অধিবেশনের পরিকল্পনা নিয়ে জানতে চাইলে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী বলেন, ১১জুন সংসদের বৈঠকে বাজেট পেশের সম্ভাবনা খুবই বেশি। তবে অধিবেশন শুরু কবে তা এখনও নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। অধিবেশনে স্বাস্থ্য ঝুঁকির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে উল্লেখ করে স্পিকার জানান, করোনা সংক্রমণ ঝুঁকির কারণে অধিবেশন কক্ষের বিকল্প কোনওভাবে বৈঠক চালানো যায় কিনা তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। তিনি জানান,  অনেক সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে তার সঙ্গে আলোচনা করেছেন। তারা চাইছেন এবারের অধিবেশন জুম ব্যবহার করে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে করা যায় কিনা। তবে এই পদ্ধতির অনেক সীমাবদ্ধতা রয়েছে। অনেকে আবার এ বিষয়ে সংবিধানে কোনও নির্দেশনা নেই বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাই সবদিক বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে।

জানা গেছে, অনলাইন ভিত্তিক অধিবেশন চালুর পথ সুগম হলেও বাজেট পেশ অধিবেশন কক্ষেই হবে। অর্থমন্ত্রীর বাজেট বক্তৃতা যতদূর সম্ভব সংক্ষিপ্ত করবেন। পরে বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনা হবে অনলাইনের মাধ্যমে। সাংবিধানিক নিয়ম রক্ষায় মহামারির মধ্যে গত ১৮ এপ্রিল বসে জাতীয় সংসদের ইতিহাসে সংক্ষিপ্ততম অধিবেশন। ওইদিন মাস্ক, গ্লাভস পরে নিরাপদ দূরত্বের আসনে বসেন সদস্যরা। পরিস্থিতি না বদলালে একই ধরনের পরিকল্পনা আছে আসন্ন বাজেট অধিবেশন নিয়েও। সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত বাজেট পেশ করার এক বা দুই দিন আগে অধিবেশন শুরু হয়। কিন্তু এবার সেই সময় পাওয়া যাবে না।

১১ জুনেই অধিবেশন শুরু হতে পারে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সংসদের চিফ হুইপ নূর-ই-আলম চৌধুরী বলেন, অধিবেশন কবে হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি তবে এটি ১০ বা ১১ জুনের যে কোনওদিন বসতে পারে। এক প্রশ্নের জবাবে চীফ হুইপ জানান, বাজেটের ওপর সাধারণ আলোচনার বিধান রয়েছে যে কারণে চাইলেও আমরা অধিবেশনটি একেবারে সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ করতে পারছি না। তবে যতদূর সম্ভব আলোচনা কম করে অধিবেশন সংক্ষিপ্ত করার চেষ্টা করা হবে। এক্ষেত্রে অতীতের মতো ৫০/৬০ ঘণ্টা আলোচনা হবে না। আমরা সন্তোষজনক পর্যায়ে আলোচনার চেষ্টা করব।

এ বিষয়ে স্পিকার শিরীন শারমিন বলেন, আগের অধিবেশনে তেমন কোনও কার্যক্রম ছিল না। তাই অল্প সংখ্যক সদস্যদের নিয়ে বৈঠক বসার পরপরই মুলতবি করা সম্ভব হয়েছে। এবারে পরিস্থিতি ভিন্ন। কারণ বাজেটের ওপর আলোচনার বিষয় রয়েছে। এতে সদস্যরা কথা বলবেন। মুখের মাধ্যমেই করোনা ভাইরাস ছড়ায়। অধিবেশন কক্ষ পুরোপুরি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এসিতে এই ভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর ঝুঁকির কথা জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তাই চূড়ান্ত কিছু এখন বলা সম্ভব নয়।

সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৮ এপ্রিলের অধিবেশনে মোট ১৩৫ জন সংসদ সদস্য অংশ নিয়েছিলেন। এদিকে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের অধিবেশনে ভিডিও কনফারেন্সের বিষয়ে আলোচনা ওঠেছিল। কিন্তু ওই অধিবেশনে তেমন কোনও কার্যক্রম ছিল না বিধায় ওই পরিকল্পনা বাদ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু এবারে জোরালোভাবেই ভিডিও কনফারেন্সের কথা ভাবতে হচ্ছে।

অধিবেশন কক্ষের বাইরেও ঝুঁকি

জানা গেছে, সংসদের নিরাপত্তা নিয়োজিত থাকা শতাধিক পুলিশ সদস্য ও ৫৮ জন আনসার সদস্য করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। পরীক্ষায় তাদের পজিটিভ আসার পরপরই কোয়ারেন্টিনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। একজন সংসদ সদস্যও করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। ফলে করোনা আতঙ্ক বিরাজ করছে সংসদের পুরো এলাকা জুড়েই। যদিও লকডাউন ঘোষণার পরপরই সংসদের সবকটি প্রবেশ পথে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করার পাশাপাশি সব ধরনের যাতায়াত বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, অধিবেশনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতিরিক্ত সদস্য মোতায়েনের প্রয়োজন হয়। আর এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিশেষ করে পুলিশের বেশ কিছু সদস্য করোনা আক্রান্ত হওয়ায় সংসদ এলাকায় তাদের দায়িত্ব পালন নিয়ে নতুন শঙ্কা যুক্ত হয়েছে। অধিবেশনের সময় দায়িত্ব পালনকারী এসব সদস্যের কারও মধ্যে উপসর্গবিহীন করোনা সংক্রমণ থাকলে সকলেই নতুন করে ঝুঁকিতে পড়ে যাবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চিফ হুইপ বলেন, সংসদ এলাকায় দায়িত্ব পালনকারী আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেসব সদস্যের করোনা পজিটিভ হয়েছিল তারা স্ব স্ব বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে কোয়ারেন্টিনে  চলে গেছেন। এদের কারণে সংসদ এলাকায় কোনও ঝুঁকি আছে বলে মনে করি না। আর অধিবেশনের সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যেসব সদস্য মোতায়েন করা হবে তাদের বিষয়ে সার্বিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। করোনা পজিটিভ কারো সংস্পর্শে ছিল কিনা সেটাও খতিয়ে দেখা হবে। সার্বিক বিবেচনায় যারা করোনা মুক্ত তাদের যাতে এই এলাকায় দায়িত্ব দেওয়া হয় সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন