করোনা আক্রান্ত মুমূর্ষু রোগীদের ক্ষেত্রে রেমডেসিভির ব্যবহার করা হবে। এরইমধ্যে দেশের দু’টি কোম্পানি তাদের উৎপাদিত রেমডেসিভির ওষুধের নমুনা জমা দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরে। অনুমতি মিললেই বাজারজাত করবে তারা।
নমুনা জমা দেয়া কোম্পানি দু’টো হল বেক্সিমকো ও এসকেএফ। গত বুধবার নিজেদের প্রস্তুতকৃত ওষুধের নমুনা জমা দিয়েছে বেক্সিমকো আর শনিবার জমা দিয়েছে এসকেএফ। যা পরীক্ষায় ১৫ থেকে ১৬ দিন সময় লাগতে পারে বলে জানিয়েছে ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। এরপরই বাজারজাত করতে পারবে কোম্পানিগুলো।
বেক্সিমকো ও এসকেএফ ছাড়াও আরো ৬টি কোম্পানি ওষুধটি উৎপাদনের রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে সরকারের নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে। কোম্পানিগুলোর মধ্যে আছে, স্কয়ার, বিকন, ইনসেপ্টা, অপসনিন, পপুলার ও হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস।
এদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পর বাংলাদেশ করোনা রোগীদের ক্ষেত্রে এই ঔষধ ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে। তবে করোনার মুমূর্ষু রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার শুরু হলেও মূলত এই রেমডিসিভির ইবোলায় আক্রান্তদের প্রতিষেধক হিসেবেই প্রস্তুত করা হয়েছিল।
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, ‘রেমডেসিভির অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ। একসময় ইবোলাতে ব্যবহার হতো। এখন ‘ইমার্জেন্সি অথোরাইজেশন’ দিয়েছে আমেরিকার দ্য ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। একজন রোগীর সুস্থ্য হতে যেখানে ১৫ থেকে ১৬ দিন লাগে, সেখানে এই ওষুধ প্রয়োগের ফলে ১১ দিনে তিনি সুস্থ্য হয়ে উঠবেন।’
করোনা রোগীদের চিকিৎসায় গত সপ্তাহে রেমডিসিভির নামের একটি ওষুধ ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর। গত ৭ মে ওষুধটি করোনা রোগীদের ওপর প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে জাপান সরকারও।
রেমডিসিভির এর উদ্ভাবক মার্কিন প্রতিষ্ঠান গিলিয়েড সায়েন্সেস। এলডিসি বা স্বল্প আয়ের দেশের তালিকায় থাকা দেশগুলোর জন্য প্রদত্ত মেধাস্বত্ত্ব সুবিধার আওতায় বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠানগুলো এটি উৎপাদনের উদ্যোগ নেয়।
এসকেএফের পরিচালক (মার্কেটিং অ্যান্ড সেলস) ডা. মুহাম্মদ মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘শনিবার আমরা নমুনা জমা দিয়েছি। শুক্রবার দেশে প্রথমবারের মতো করোনা চিকিৎসায় কার্যকর জেনেরিক রেমডেসিভির উৎপাদন কাজ শেষ হয়েছে। আমরা ওষুধটি রেমিভির নামে বাজারজাত করবো। তবে এর আগে আরও কয়েকটি ধাপ অনুসরণ করতে হবে। সব প্রক্রিয়া ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের অনুমোদন পেলে রেমডেসিভির বাজারে আসবে। তবে এ ওষুধের ডিস্ট্রিবিউশন সাধারণ ওষুধের মতো হবে না। কেবলমাত্র কিছু হাসপাতাল এবং ইনস্টিটিউশনে এই ওষুধ সরবরাহ করা হবে। কোনো খুচরা ওষুধের দোকানে এই রেমডেসিভির পাওয়া যাবে না।’
মূল্য নির্ধারণ ও বাজারজাত প্রক্রিয়া
ওষুধের দাম কত নির্ধারণ করা হয়েছে? আর একজন রোগীকে সুস্থ্য হতে কত ডোজ ওষুধ নিতে হবে? জবাবে ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা প্রতিটি ফাইলের দাম পাঁচ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণ করেছি৷ একজন রোগীকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পাঁচ থেকে ১০ দিন এটা নিতে হবে। তবে প্রথম দিন দুই ডোজ নিতে হবে। অর্থাৎ যার সবচেয়ে কম লাগবে তারও ছয়টি ডোজ নিতে হবে। যার মূল্য পড়বে কমপক্ষে ৩৩ হাজার টাকা। আর যার সবচেয়ে বেশি লাগবে তার নিতে হবে ১১টি ডোজ। যার মূল্য ৬০ হাজার ৫০০ টাকা।’
ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, আমাদের কাছে যে দু’টি কোম্পানির নমুনা জমা দেওয়া হয়েছে তাদের উভয়ের দাম প্রায় একই। তিনি বলেন, ‘এই ওষুধগুলোর দাম আমরা নির্ধারণ করি না। এটা কোম্পানিগুলোই ঠিক করে। এখন যেহেতু কাঁচামালের দাম বেশি পড়ছে এই কারণে ওষুধের দামও বেড়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, এসকেএফ এর উৎপাদন কাজ শেষ পর্যায়ে। এখনও কিছু পরীক্ষা বাকি আছে। সেগুলো শেষ হলেই ‘ফিনিশড প্রোডাক্ট’ হিসেবে এটি বাজারজাতের জন্য প্রস্তুত হবে। তবে এরিমধ্যে বেক্সিমকো বানিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে দিয়েছে। যদিও অনুমোদন হওয়ার আগ পর্যন্ত তারাও বাজারজাত করতে পারবে না।
সব ঠিকঠাক থাকলে পরীক্ষা-নিরিক্ষা করতে ১৫ থেকে ১৬ দিন লেগে যাবে বলে জানান রুহুল আমিন।
এই মুহূর্তে দেশের বাজারেই এই ওষুধ বাজারজাতের পরিকল্পনা কোম্পানিগুলোর। এখনও কেউ দেশের বাইরে রফতানির জন্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদন করেনি বলেও জানান অধিদপ্তরের পরিচালক রুহুল আমিন। অন্যদিকে এসকেএফের মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের কাছে দেশের মানুষই প্রথম অগ্রাধিকার। দেশের চাহিদা পূরণ হলে যদি বেশি উৎপাদন করতে পারি তাহলে বিদেশে রফতানির অনুমতি আমরা চাইবো।’
ব্যবহারের নিয়ম
রেমডেসিভির মূলত ইনজেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। এই বিষয়ে এসকেএফ থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সিমিন হোসেন বলেছেন, ‘ওষুধ প্রশাসন অধিদফতর গত মার্চ মাসে ওষুধটি ব্যবহারের অনুমতি দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানের ফর্মুলেশন বিজ্ঞানীরা মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে রেমডেসিভির নিয়ে কাজ শুরু করেন। যেহেতু এটি একটি শিরায় দেওয়া ইনজেকশন, সে কারণে এর উৎপাদনে সূক্ষ্ম প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়।’
ওষুধের দামটি সাধারণ মানুষের নাগালে রাখতে সরকারকে ভর্তুকি দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন সীতেশ চন্দ্র বাছার।
সূত্র: ডয়চে ভেলে