করোনা প্রতিরোধে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করবে চীন

করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে ব্যাপক হারে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করবে চীন। স্কুল-কলেজ চালুসহ স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় ফিরে যাওয়ার আগে সর্তকতা হিসেবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

দ্য সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট জানায়, ভবিষ্যতে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে চীনের সর্বোচ্চ আক্রান্ত এলাকাগুলোর প্রত্যেক জনগোষ্ঠীকে নিউক্লিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করা হবে। গত ২২ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী লি কেকিয়াংয়ের নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় গঠিত কেন্দ্রীয় দল জানায়, পুনরায় সংক্রমণ ঠেকানোর পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনৈতিক অবস্থা ও সামাজিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

হাসপাতাল, শুল্ক সংস্থা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিউক্লিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিট দেওয়া হবে। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে ব্যাপক পরিসরে জরুরি কাজে নিয়োজিতদের যত দ্রুত সম্ভব পরীক্ষা করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

দলটি আরও জানায়, ক্লাস্টার সংক্রমণ প্রতিরোধের জন্য হাসপাতাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জায়গাগুলো এখন থেকে স্থানীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। পহেলা মে থেকে দেশটিতে শুরু হতে যাচ্ছে ‘গোল্ডেন উইক’। এ উপলক্ষে সাত দিনব্যাপী করোনাভাইরাসের বিস্তার নিয়ন্ত্রণের জন্য কর্মসূচি নেওয়া হবে।

বেইজিংয়ের হেলথ গভর্নেন্স ইনিশিয়েটিভের নির্বাহী পরিচালক জিয়া পিং বলেন, ‘নিউক্লিক অ্যাসিড ও অ্যান্টিবডি— দুটো পরীক্ষারই প্রয়োজন আছে। কেবল নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষা করে উপসর্গহীন করোনা বাহকদের শনাক্ত করা যাবে না। অন্যদিকে, অ্যান্টিবডি টেস্টিং কিটগুলোর মানও বিভিন্ন ধরনের।’

গোয়াংজু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ওয়াং জিনহুয়া জানান, শিক্ষার্থীরা যাতে স্কুলে ফিরে যেতে পারে ও বিদেশি যাত্রীরা যাতে চীনে আসতে পারে, সেজন্য ব্যাপক আকারে এই দুটি পরীক্ষা করা প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ‘এই দুই পরীক্ষার মাধ্যমে করোনা আক্রান্ত শনাক্ত করে কোয়ারেন্টিন করা ছাড়াও মহামারি সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা যাবে, যা ভবিষ্যতে ভাইরাসটিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করবে।’

এ ছাড়াও, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যাও জানা যাবে। ওয়াং বলেন, ‘আক্রান্তদের অ্যান্টিবডির পরিবর্তন, যারা সুস্থ হয়ে উঠেছেন তাদের মধ্যে ভাইরাসটির প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়েছে কি না, সেসব জানা প্রয়োজন। পাশাপাশি, যদি সুস্থ হয়ে ওঠাদের মধ্যে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরি হয়, তবে তা কি কয়েক মাস পর দুর্বল হয়ে যাবে? নাকি দীর্ঘসময় পর্যন্ত থাকবে?— এসব প্রশ্নের উত্তরও জানা জরুরি।’

গত ২১ এপ্রিল সায়েন্স ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নেদারল্যান্ডস ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি অঞ্চলে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করে দেখা গেছে— নির্দিষ্ট জনসংখ্যার প্রায় ২ থেকে ৩০ শতাংশ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।

পরিসংখ্যানটি বলছে, নিশ্চিত করোনা রোগীর যে সংখ্যাটা আমরা জানতে পারছি, তার তুলনায় প্রকৃত আক্রান্তের সংখ্যা অনেক বেশি। অধিকাংশের দেহেই হালকা সংক্রমণ হয়েছে, মৃদু উপসর্গ দেখা গেছে। তবে, অ্যান্টিবডি টেস্ট ও প্রাপ্ত ডেটা নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।

এদিকে, সবাইকে অ্যান্টিবডি পরীক্ষা করার প্রয়োজন নেই বলে জানান চীনের কয়েকজন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ।

সাংহাইয়ের হুশান হাসপাতালের সংক্রামক রোগ বিভাগের পরিচালক জ্যাং ওয়েনহং বলেন, ‘মহামারি শেষ হওয়ার পর এমন পরীক্ষা করাটা জরুরি না। পরীক্ষা তখনই প্রয়োজন হতো, যখন আক্রান্তের সংখ্যা বেশি ছিল।’

তিনি বলেন, ‘আমরা যদি উহানের ১৫ লাখ মানুষের নিউক্লিক অ্যাসিড পরীক্ষার পরিকল্পনা করি, তবে সবার পরীক্ষা শেষ করতে ৭০০ দিন লাগবে। স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো এক দিনে সর্বোচ্চ ২০ হাজার টেস্ট করতে পারে। তাই সবাইকে পরীক্ষায় আওতায় আনার পরিকল্পনা অবাস্তব ও অকার্যকর।’

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন