করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশকে সিএমসি’র সহায়তা

হঠাৎ করেই ছড়িয়ে পড়া বৈশ্বিক মহামারী যেন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারী ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন, (সিএমসি); চায়না জেনারেল টেকনোলজি গ্রুপ (জিটি) এবং বাংলাদেশের মানুষকে আরও কাছে নিয়ে এসেছে। গত ১২ই এপ্রিল,বাংলাদেশের কোভিড-১৯ মোকাবেলার সংকটপুর্ণ সময়ে সিএমসি খুব দ্রুত এগিয়ে আসে এবং বিপুল সংখ্যক মহামারীরোধী সামগ্রী বাংলাদেশ সরকারকে অনুদান দেয়। যার মাঝে রয়েছে ১০ লক্ষ মাস্ক, ১০ হাজার নিরাপত্তা স্যুট, ১০ হাজার গগলস এবং ২ হাজার কপালের তাপমাত্রা পরিমাপক থার্মোমিটার। স্থানীয় সময় ২.০০ টায়, রাজধানী ঢাকায় সিএমসি এবং বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য এবং পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের মাঝে অনুদান সামগ্রী হস্তান্তরের একটি অনুষ্ঠান হয়।

এপ্রিলের শুরু থেকে হঠাতই মহামারীর ঘন প্রাদুর্ভাব বাংলাদেশে ছড়িয়ে পরে। এখন পর্যন্ত, ৪১৮৬ জন আক্রান্ত এবং ১২৭ জন মৃত্যুবরণ করেছেন, এবং হাজার হাজার মানুষ আইসোলেসনে রয়েছে। দুর্বল অর্থনীতি আর মেডিকেল সামগ্রীর অভাবের উভয়সঙ্কটে, বিশেষত মহামারী প্রতিরোধ সামগ্রীর অভাবের কারণে বাংলাদেশের মহামারী প্রতিরোধ ব্যবস্থা খুবই করুণ।দুঃসময়ে বন্ধুত্তের হাত বারিয়ে চীনের কেন্দ্রীয় এন্টারপ্রাইজ হিসেবে সিএমসি ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে বাংলাদেশের বাজারে উৎপাদনশীল। সিএমসি “বেল্ট অ্যান্ড রোড” উদ্যোগ এবং “চীন-মঙ্গোল-ভারত-মায়ানমার” অর্থনৈতিক করিডোরের জন্য বড় ল্যান্ডমার্ক প্রকল্প গ্রহণ করেছে। অতএব, বাংলাদেশের মানুষের কোভিড-১৯ দুর্ভোগের সাথে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে, সিএমসি মেডিকেল সামগ্রী ক্রয়ের এবং সরবরাহের বিভিন্ন বাধা অতিক্রম করে যত দ্রুত সম্ভব বিপুল পরিমাণ মহামারী প্রতিরোধ সামগ্রী বাংলাদেশকে পাঠিয়েছে।

৭০ বছর ধরে বিকাশমান সিএমসি, চীনে প্রতিষ্ঠিত নতুন বৃহত্তর রাষ্ট্র-মালিকানাধীন উদ্যোগ যার মূল ব্যবসা আন্তর্জাতিক প্রকৌশল ঠিকাদারি এবং ইলেক্ট্রো-মেকানিকাল পন্যের আমদানি-রপ্তানি। ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে, চীনা এন্টারপ্রাইজগুলোর দ্বারা গৃহীত আন্তর্জাতিক প্রকল্পের প্রথম ব্যাচ থেকে শুরু করে চীন-বাংলাদেশ যৌথ উদ্যোগে বৃহত্তম বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পটি সম্পন্ন হওয়ার পথে। সিএমসি সর্বদা বাংলাদেশের সাথে গভীরভাবে যুক্ত, বাংলাদেশী জাতীয় অর্থনীতির বিকাশের পথে সাক্ষী এবং নিজেকে উত্সর্গ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।

সিএমসি বাংলাদেশের জনগণের ভাল বন্ধু এবং চীন-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের এবং অর্থনৈতিক-বাণিজ্য সহযোগিতার একটি বন্ধনে পরিণত হয়েছে। আমরা দেশের প্রথম আধুনিক কয়লা খনি এবং প্রথম কয়লা চালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছি, দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নের জন্য শক্ত বিদ্যুৎ শক্তির ভিত্তি স্থাপন করেছি। বর্তমানে সিএমসির নির্মাণাধীন পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি প্রথম ৬৬০,০০০ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন তাপ বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কমিশনের পর, ৪৮.৫৩ বিলিয়ন কিলোওয়াট ঘণ্টার বার্ষিক বিদ্যুৎ উত্পাদন ক্ষমতা সম্পন্ন কেন্দ্রটি হবে বাংলাদেশের বৃহত্তম কয়লাচালিত বিদ্যুৎ কেন্দ্র, যা বাংলাদেশের বর্তমান গ্রিড ক্যাপাসিটির ১৫% এরও অধিক। বাণিজ্যিক কার্যক্রম পরিচালনার পরে এটি দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে বাংলাদেশের বিদ্যুৎ ব্যবহারের টানাপোড়েনকে ব্যাপকভাবে প্রশমিত করবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের উন্নয়নে জোর দেবে।

সাম্প্রতিক বছরগুলিতে, সিএমসি বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থাগুলির সাথে সামাজিক দায়বদ্ধতার কঠোর অনুশীলন করেছে, এবং চিতলিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি শিক্ষাদান ভবন নির্মাণের জন্য ২০১৯ সালে ২.৫ কোটি  টাকার (প্রায় দুই মিলিয়ন আরএমবি) একটি বিশেষ অনুদান দিয়েছে, যা স্থানীয় শিক্ষার বিকাশে সাহায্য করেছে। এদিকে, আমরা বাংলাদেশে যে প্রকল্পগুলো অবস্থিত সেখানকার জনসাধারণের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখার দিকে মনোযোগ দিচ্ছি এবং প্রকল্প নির্মাণের মাধ্যমে পার্শ্ববর্তী অঞ্চলগুলির জন্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক সুবিধাগুলি তৈরি করছি।

পায়রা প্রকল্প বাস্তবায়নে, আমাদের সংস্থা স্থানীয় বাসিন্দাদের জন্য একটি উচ্চমানের পুনর্বাসনের ক্ষেত্র তৈরি করি, যা তাদের জীবনযাত্রার পরিবেশের উল্লেখযোগ্য উন্নতি করেছে, যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দ্বারা সম্পূর্ণরূপে স্বীকৃত এবং উচ্চ মূল্যায়ন করা হয়েছিল। পায়রা প্রকল্পটি কার্যকর হওয়ার পর, বাংলাদেশ বিনিয়োগ ও উন্নয়ন তহবিলে প্রতি কিলোওয়াট ঘন্টার জন্য ০.০৩ টাকা বিনিয়োগ করা হবে। “একই নৌকায় একে অপরকে সহায়তা করা” প্রকল্প পদ্ধতিটি বিনিয়োগ তহবিল গঠন, যৌথভাবে ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক নির্মাণ এবং যৌথভাবে বাণিজ্য শিল্প চেইন গড়ে তোলার লক্ষ্য অর্জন করে, যা বাংলাদেশে একটি টেকসই শিল্প বিকাশের প্রবণতা তৈরি করবে এবং ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগ এবং ‘চীন-মঙ্গোল-ভারত-মায়ানমার’ অর্থনৈতিক করিডোরকে উন্নততরভাবে বাস্তবে পরিণত করবে।

হাজার হাজার মাইল দূরে থাকা সত্ত্বেও ভাল বন্ধুরা একে অপরকে কাছাকাছি অনুভব করে। শুধুই একটি পানির ধারা দিয়ে আলাদা হওয়া চীন এবং বাংলাদেশের মাঝে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদি বন্ধুত্ব। চীনে যখন প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ে, বাংলাদেশ তখন জরুরী মেডিকেল সাপ্লাই পাঠিয়ে চীনের পাশে দাঁড়ায়। চীনে একটি প্রবাদ আছে, “তুমি যদি আমাকে একটি পীচ দাও, আমি তোমাকে পুরো বাগানই ফিরিয়ে দেব।” এখন, আমাদের বাংলাদেশি বন্ধুদের সাহায্য প্রয়োজন, আমাদের সরকার এবং আমাদের সংস্থাগুলো বাংলাদেশ সরকার ও বাংলদেশের মানুষকে এই কঠিন সময় পার করতে সম্ভব সকল প্রকার সাহায্য প্রদানে অটল।

অনুদান সামগ্রী হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চায়না ন্যাশনাল মেশিনারী ইমপোর্ট অ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন, (সিএমসি) এর জেনারেল ম্যানেজার চি ইউয়ে, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার উই না, ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার ঝু গুয়াংলেই, অপারেশন্স ম্যানেজার গুয়ো জিয়াংগনান, ডেপুটি ম্যানেজার ইঞ্জিঃ মোহাম্মদ হাসিব উদ্দিন তালুকদার, কমার্শিয়াল এক্সিকিউটিভ ওয়াং জিচিয়াং,জেনারেল ম্যানেজার চি ইউয়ে বলেন সিএমসি গত ৩০ বছরেরও বেশী সময় ধরে নিষ্ঠার সাথে বাংলাদেশের পাওয়ার সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি উভয় দেশের জনগণের যৌথ প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ কোভিড-১৯ এর বিস্তার নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সমৃদ্ধি এবং উন্নয়ন ফিরিয়ে আনতে সমর্থ হবে।

আমাদের বিশ্বাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পর চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে বন্ধুত্ব এবং সম্পর্ক আরও গভীর ও শক্তিশালী হবে! বাংলাদেশে সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোর ডিপোট (সিএমএসডি) এর ডিপোট ডিরেক্টর জনাব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডক্টর মোঃ শহিদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশের প্রয়োজনের সময় চীন সরকার, চীনের মানুষ এবং সিএমসি’র এই সহায়তা বাংলাদেশ কখনই ভুলবেনা। এই মহামারী সামগ্রিগুলো ঢাকা এবং অন্যান্য এলাকার সরবরাহ ঘাটতি দূর করবে এবং মহামারী প্রতিরোধ এবং নিয়ন্ত্রনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন