দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন করোনায় আক্রান্তরা ‘রেমডিসিভির’ প্রয়োগে

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে পরীক্ষামূলক একটি ওষুধ প্রয়োগে আশা জাগানিয়া ফল পাওয়া গেছে। রেমডিসিভির নামের ওই ওষুধ গ্রহণের পর সাধারণ রোগীদের তুলনায় দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠছেন আক্রান্তরা। এক সপ্তাহেরও কম সময়ের মধ্যেই হাসপাতাল ছেড়ে বাড়ি যেতে পারছেন তারা।

ওষুধটি নিয়ে পরীক্ষা চালানো চিকিৎসকদের মধ্যকার একটি ভিডিও কনফারেন্সের বরাত দিয়ে বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) স্ট্যাট নিউজের এক প্রতিবেদনে এমনটা বলা হয়েছে।

ব্লুমবার্গের আরেকটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, গিলিয়াড ফার্মার ওষুধ যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং কানাডায় করোনায় গুরুতর অসুস্থ ৫৩ ব্যক্তিকে দেওয়া হয়। তাদের কৃত্রিম শ্বাসপ্রশ্বাস যন্ত্র বা ভেন্টিলেটর দিয়ে জীবিত রাখা হয়েছিল। এসব রোগীকে টানা ৬ দিন ধরে রেমডিসিভির ওষুধের নিয়মিত ডোজ দেওয়া হয়।

চিকিৎসকের বলছেন, কয়েক দিনের মাথায় ৬৮ শতাংশ বা তিন ভাগের দুইভাগ রোগীর শারীরিক অবস্থার উন্নতি হয়। এর ফলে যান্ত্রিক ব্যবস্থার মাধ্যমে শ্বাস নিচ্ছিলেন, এমন ৩০ জন রোগীর মধ্যে ১৭ জনের আর যন্ত্র ব্যবহারের প্রয়োজন হয়নি। প্রায় সবাই বাড়ি গেছেন।

‘সবচেয়ে ভালো খবর হল আমাদের অধিকাংশ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি যাচ্ছেন। এখন দুইজন বাকি আছেন,’ ইউনিভার্সিটি অব শিকাগোর চিকিৎসক ডা. ক্যাথলিন মোলানে বলেন, ‘অধিকাংশ রোগী ৬ দিনের ভেতরই সুস্থ হয়েছেন। সর্বোচ্চ ডোজ দিতে হচ্ছে ১০ দিন।’

তবে এ বিষয়ে সিএনএনের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো জানায়, চূড়ান্ত ফলাফল না আসা পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করবে না তারা।

রেমডিসিভির প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান গিলিয়াড সায়েন্সেস জানিয়েছে, ওষুধটি ইবোলার চিকিৎসায়ও ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে তাতে তেমন সফলতা পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে প্রাণীদের মধ্যে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা যায়, এটি সারস ও মারস করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে বেশ কার্যকরী। ফেব্রুয়ারিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কোভিড-১৯ প্রতিরোধে রেমডিসিভির একটি সম্ভাব্য ওষুধ বলে ঘোষণা দিয়েছিল।

গিলিয়াড জানিয়েছে, চলতি মাসের শেষের দিকেই ওষুধটির কার্যকারিতা সম্পর্কে চলমান পরীক্ষার ফলাফল পাওয়ার প্রত্যাশা করছে তারা।

এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২১০টি দেশ ও অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এতে বিশ্বব্যাপী আক্রান্ত হয়েছে ২১ লাখ ৯০ হাজারের বেশি মানুষ। মারা গেছে ১ লাখ ৪৭ হাজার। এখন পর্যন্ত ভাইরাসটির কোনও প্রতিষেধক বা টিকা আবিষ্কার হয়নি। তবে বিশ্বজুড়ে শত শত প্রতিষ্ঠান ও গবেষকের দল টিকা তৈরিতে কাজ করছে। এর মধ্যে মানব দেহে পরীক্ষা শুরু হয়েছে বেশকিছু টিকার। কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী বছরের আগে বাজারে আসার কোনও সম্ভাবনা নেই কোনও টিকার। এমতাবস্থায় রেমডিসিভির ব্যবহারে রোগীদের দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠার খবর অত্যন্ত আশা জাগানিয়া।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন