মাজেদের ফাঁসি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যার মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের ফাঁসি বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির বলে মন্তব্য করেছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

তিনি বলেছেন, ‘এটা (আবদুল মাজেদের ফাঁসি) আমাদের জন্য স্বস্তির; পর্যায়ক্রমে বঙ্গবন্ধুর সকল খুনিদের এনে রায় কার্যকর করা হবে।’ ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, রবিবার (১২ এপ্রিল) রাত ১২ টা এক মিনিটে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসির দড়িতে ঝুলিয়ে ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মাজেদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

এর আগে শনিবার রাতে কারা চিকিৎসক কারাগারের ভেতর ঢোকেন। এছাড়াও রাত সোয়া ১০টার দিকে ঢাকার সিভিল সার্জন এবং জেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন, একজন মাওলানা, একজন ইমাম কারাগারের ভেতরে যান।

পরে রাত ১০টা ৫২ মিনিটে কারাগারে প্রবেশ করেন কারা মহাপরিদর্শক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোস্তফা কামাল পাশা।

পরে সকলের উপস্থিতিতে প্রধান জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া ও তার সহকারী মনির এবং সিরাজ এই ফাঁসির রায় কার্যকর করেন বলে জানা গেছে। মো. শাহজাহান ভূঁইয়া দীর্ঘ ৪১ বছর ধরে কারাবন্দি। জল্লাদ শাহজাহান এর আগে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫ ঘাতককেও ফাঁসির দড়িতে ঝুঁলিয়েছেন। এছাড়া এদেশের কয়েকজন যুদ্ধাপরাধী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলা ভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যা মামলার আসামি খুকু, মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামিদের ফাঁসি কার্যকর করেন জল্লাদ শাহজাহান।

স্বজনদের সাক্ষাৎ : এর আগে শুক্রবার (১০ এপ্রিল) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় স্বজনদের পাঁচ সদস্যের একটি দল কেরানীগঞ্জের কেন্দ্রীয় কারাগারে মাজেদের সঙ্গে দেখা করেন। সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করেন। মাজেদের স্বজনদের মধ্যে ছিলেন স্ত্রী সালেহা, স্ত্রীর বোন ও বোন জামাই, ভাতিজা ও এক চাচা শ্বশুরসহ মোট পাঁচ জন।

আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার : এর আগে গত ৬ এপ্রিল দিনগত রাত ৩ টায় রাজধানী থেকে আব্দুল মাজেদকে গ্রেপ্তার করে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। মাজেদকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ : গত ৭ এপ্রিল বেলা সোয়া ১২টার দিকে তাকে ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করা হয়। এরপর মামলার শুনানির ১ ঘণ্টা পর দুপুর ১টা ৫ মিনিটের দিকে তাকে প্রিজন ভ্যানে কেরানীগঞ্জে অবস্থিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। শুনানির সময় মাজেদের পক্ষে আদালতে কোনো আইনজীবী ছিলেন না।

মৃত‌্যুদণ্ডের পরোয়ানা জা‌রি : গত ৮ এপ্রিল আব্দুল মাজেদের বিরু‌দ্ধে মৃত‌্যুদ‌ণ্ডের সাজার প‌রোয়ানা জা‌রি ক‌রে‌ন আদালত। ওই দিন দুপু‌রে ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ মো. হেলাল চৌধুরী বঙ্গবন্ধু হত‌্যা মামলায় তা‌কে গ্রেপ্তার দে‌খি‌য়ে এ প‌রোয়ানা ইস‌্যু ক‌রেন।

প্রাণভিক্ষা চেয়েছিলেন মাজেদ : গত ৮ এপ্রিল রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছেন বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত‌্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ক্যাপ্টেন (বরখাস্তকৃত) আব্দুল মাজেদ। গত ৯ এপ্রিল আব্দুল মাজেদের প্রাণভিক্ষার আবেদন রাষ্ট্রপতি বাতিল করে দেন। পরে ওই চিঠি ওই দিনই কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়।

প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বরখাস্ত হওয়া ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ ২৩ বছর ধরে কলকাতায় আত্মগোপনে ছিলেন। গত ১৬ মার্চ তিনি ঢাকায় আসেন।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন