আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আবদুল মাজেদের ফাঁসি কার্যকরের প্রত্যাশা করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।
মঙ্গলবার দুপুরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিওবার্তায় তিনি এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা দণ্ডপ্রাপ্ত খুনিদের দেশে ফিরিয়ে এনে দণ্ডাদেশ কার্যকরের অপেক্ষায় ছিলাম। তাদেরই একজন ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদ পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। কিছুক্ষণ আগে তাকে আদালতে সোপর্দ করা হয়। আদালত থেকে হাজতবাসের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে সেখানে পাঠানো হয়। তিনি বলেন, ‘তার স্ত্রী সানা বেগম, বাড়ি নম্বর ১০/এ, রোড নম্বর-০১, ক্যান্টনমেন্ট আবাসিক এলাকা। তিনি সেখানেই বসবাস করতেন। আমাদের গোয়েন্দাদের কাছে তার সব তথ্য ছিল।’
আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘১৫ আগস্ট ১৯৭৫ সালে ধানমণ্ডির ৩২ নম্বর রোডে বঙ্গবন্ধুর হত্যাকাণ্ডের সময় আসামি ক্যাপ্টেন আব্দুল মাজেদ এবং নূর ও রিসালদার মুসলেহউদ্দিন- এই তিনজন সেখানে ছিলেন। আরও কয়েকজন ছিলেন। এই খুনি শুধু বঙ্গবন্ধুর খুনে অংশগ্রহণ করেননি, তিনি জেলহত্যায়ও অংশগ্রহণ করেছিলেন বলে আমাদের জানা রয়েছে। খুনের পর তিনি জিয়াউর রহমানের নির্দেশ মোতাবেক বঙ্গভবনে এবং অন্যান্য জায়গায় কাজ করেছেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আশা করি আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা তার দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে পারব। যারা এই কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন, তাদের ধন্যবাদ দিয়ে আমি মনে করি, মুজিববর্ষের একটি শ্রেষ্ঠ উপহার আমরা দেশবাসীকে দিতে পেরেছি।’ ‘তৎকালীন জিয়াউর রহমান সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচারের বদলে তাদের নানাভাবে পুরস্কৃত করেছে এবং ইনডেমনিটি বিলের মাধ্যমে তাদের যাতে বিচার না হয়, সেই ব্যবস্থাটি পাকাপোক্ত করেছে।’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এই খুনিকে আমরা দেখেছি সেই সরকারের আশীর্বাদে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন দূতাবাসে চাকরিরত অবস্থায় ছিলেন। এর পর যখন ১৯৯৭ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে তখন তিনি আত্মগোপন করেন।’ তিনি বলেন, ‘আমাদের গোয়েন্দা তৎপরতা ছিল তাকে ধরার জন্য। আমাদের গোয়েন্দারা এবং পুলিশ বাহিনী যারা কাজে ছিল তারা ভালো করেছে বলে আমি পূর্বেই বলেছি।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কমিটমেন্ট যত খুনি যেখানেই আছে আমরা সবাইকে ফিরিয়ে আনব। যেখানেই থাকুক তাদের আনার জন্য সর্বপ্রকার প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে। মাঝে মাঝে বিস্ময়ে হতবাক হই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যদি দেশে না ফিরতেন তা হলে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার কোন পর্যায়ে যেত।’ প্রসঙ্গত গতকাল সোমবার রাতে মাজেদকে ঢাকায় গ্রেফতার করা হয় বলে মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল দৈনিক যুগান্তরকে নিশ্চিত করেন।
মাজেদকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ দুপুর ১২টার দিকে সিএমএম আদালতে হাজির করে ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর পর আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশে দেন। আবদুল মাজেদ ভারতে পালিয়ে ছিলেন বলে এর আগে বিভিন্ন সময়ে খবর এসেছে সংবাদমাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আবদুল মাজেদসহ ১২ আসামিকে ২০০৯ সালে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেয়া হয়। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের মধ্যে সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশীদ খান, বজলুল হুদা, একেএম মহিউদ্দিন আহমেদ ও মুহিউদ্দিন আহমেদের ফাঁসি ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি কার্যকর হয়।
রায় কার্যকরের আগে ২০০২ সালে পলাতক অবস্থায় জিম্বাবুয়েতে মারা যান আসামি আজিজ পাশা।
আবদুল মাজেদ গ্রেফতার হওয়ার পর এখন পলাতক আছেন পাঁচজন। তারা হলেন– খন্দকার আবদুর রশীদ, শরিফুল হক ডালিম, এসএইচএমবি নূর চৌধুরী, এএম রাশেদ চৌধুরী ও মোসলেম উদ্দিন।