করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন আবিষ্কারে সফল হলে বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেটি বাংলাদেশকে দেওয়ার ঘোষণা আগেই দিয়েছে চীন। তবে এই আবিষ্কারে সফল হতে বাংলাদেশকে পরীক্ষাগার হিসেবে চায় বেইজিং। এই ভ্যাকসিনের তৃতীয় ধাপ অর্থাৎ মানবদেহে পরীক্ষার জন্য বাংলাদেশের অনুমতি চায় চীন। এ বিষয়ে ঢাকার সাথে আলোচনাও চলছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত জানানো হয়নি।
পররাষ্ট্র ও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, চীনে নতুন করে করোনায় সংক্রমিত রোগী কমে যাওয়ায় এখন দেশের বাইরে সম্ভাব্য ভ্যাকসিন পরীক্ষার জন্য জায়গা খুঁজছে চীন। বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতিতে থাকায় বাংলাদেশকে এর উপযুক্ত মনে করছে চীন।
ভ্যাকসিনের প্রাপ্যতা নিশ্চিতে চীনের প্রস্তাবকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে অবহিত আছেন সরকারের ঊর্ধ্বতন এমন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘দেখুন, ঘনবসিতপূর্ণ দেশ হিসেবে করোনার সংক্রমণের ভয় আমাদের বেশি। আবার মাসের পর মাস সবকিছু বন্ধও রাখা যাবে না। এমন অবস্থায় এই করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশ শুধু নয়, পুরো বিশ্ব এর অপেক্ষায়।’
‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এই ভ্যাকসিন প্রস্তুতে কাজ করছে। চীন কিছুটা এগিয়েও রয়েছে। এমন অবস্থায় তারা বাংলাদেশে এর তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা চালাতে চায়। যদি তারা সফল হয়, তাহলে এর প্রাপ্যতা নিশ্চিত হবে। বিষয়টি এভাবে ভেবে দেখা হচ্ছে,’ বলেন তিনি।
তবে এ বিষয়ে আলোচনা এখনো মৌখিক পর্যায়ে রয়েছে উল্লেখ করে এই কর্মকর্তা বলেন, চীন এখনও আনুষ্ঠানিক চিঠি দেয়নি। তবে তারা সব ধরনের সম্ভাবনা যাচাই করছে। অন্য কয়েকটি দেশের সাথেও আলোচনা চালাচ্ছে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অনেক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি বিদেশে ওষুধ রফতানি করে থাকে। চীন বাংলাদেশে ভ্যাকসিনের পরীক্ষায় উতরে গেলে এদেশের এসব কোম্পানি এই ভ্যাকসিন উৎপাদনের অনুমতি পেরে পারে। তখন বহুল আকাঙ্ক্ষিত এই করোনার ভ্যাকসিনে বাংলাদেশের জনগণের অ্যাকসেসও বাড়বে।’
সরকারের অপর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘এটা সত্য যে চীন করোনাভাইরাসের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের তৃতীয় ধাপের জন্য জায়গা খুঁজছে। এই পর্যায়ের টেস্ট ১৫-২০ হাজার মানুষের শরীরে করতে হবে। এজন্য তারা বাংলাদেশকে উপযুক্ত ভাবছে।’
সাধারণত, যে দেশে ভাইরাস বিস্তৃত আকারে ছড়াচ্ছে, সেখানে এটি পরীক্ষা করা হয়। এতে বাস্তব জীবনে ভ্যাকসিনের প্রকৃত কার্যকারিকতা দেখা হয়ে যায়।
‘তবে সবার আগে চীনের যে প্রতিষ্ঠান এই ভ্যাকসিন তৈরির কাজ করছে সেই প্রতিষ্ঠানের মতোই বাংলাদেশেও ক্লিনিক্যাল রিসার্চ ফার্মের সাথে তাদের চুক্তি করতে হবে। হয়তো তারা বাংলাদেশে এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করছে। এরপর সরকারের কাছে অনুমতি চাইবে,’ বলেন ওই কর্মকর্তা।
জানা যায়, বিশ্বজুড়ে এক ডজনের বেশি ভ্যাকসিন আগেভাগে আনার জন্য প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। তবে এখন পর্যন্ত কোনো ভ্যাকসিন সফলভাবে তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা পর্ব পেরোতে পারেনি।
উল্লেখ্য, গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের উহান থেকে করোনাভাইরাস মহামারি ছড়ালেও গত মাস থেকে দেশটিতে দিনে সর্বোচ্চ ১০ জন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। ভাইরাসের প্রকোপ কমে যাওয়ায় চীনা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের বাইরে ভ্যাকসিন পরীক্ষা করতে চাইছে।
চীনের রাষ্ট্রনিয়ন্ত্রিত চায়না ন্যাশনাল ফার্মাসিউটিক্যাল গ্রুপের (সিনোফ্রাম) অ্যাফিলিয়েট প্রতিষ্ঠান থেকে করোনাভাইরাস প্রতিরোধী সম্ভাব্য দু’টি ভ্যাকসিন প্রস্তুত করা হয়েছে। এগুলো ইতোমধ্যে চীনে দুই হাজার মানুষের ওপর প্রয়োগ করা হয়েছে।
চীনের ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক অন্যান্য সংস্থার মধ্যে ক্লোভার বায়োফার্মাসিউটিক্যাল দেশের বাইরে ভ্যাকসিন পরীক্ষা করছে। ইতোমধ্যে তা অস্ট্রেলিয়ায় প্রাথমিক পরীক্ষা করা হয়েছে। এর বাইরে সিনোভ্যাক বায়োটেক শিগগিরই ব্রাজিলে ৯ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের মধ্যে ভ্যাকসিন প্রয়োগ করে তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করবে।