অসুস্থ মন্ত্রী ও এমপিদের সংসদের বাজেট অধিবেশনে যোগ না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। বিশেষ করে যাদের, কিডনি, লিভার, হৃদরোগ বা অন্য কোনো জটিল রোগ আছে তাদেরকে এ অনুরোধ জানানো হয়। এছাড়া অধিবেশন চলাকালে যেসব এমপি’র জ্বর বা কাশি থাকবে তাদেরকেও অধিবেশনে যোগ না দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনাভাইরাসে সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে এ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আগামী ১০ই জুন বিকেল ৫টায় চলতি সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশন শুরু হবে। এজন্য সংসদ সচিবালয় থেকে এমপিদের উপস্থিতি নিয়ে একটি তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এতে আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি রয়েছেন ৭০ জন এবং প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, বিএনপি ও শরীক দলের রয়েছেন ২০ জন এমপি। অধিবেশনে কোরাম পূর্ণ করতে অন্তত ৬০ জন সংসদ সদস্যর উপস্থিতি বাধ্যতামূলক। এ বিষয়টিকে সামনে রেখে পর্যায়ক্রমে অন্তত ৯০ এমপিকে অধিবেশনে উপস্থিত থাকতে অনুরোধ জানানো হবে। করোনা পরিস্থিতির কারনে ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়।
এ প্রসঙ্গে সরকার দলীয় চীফ হুইপ নূর ই আলম চৌধুরী বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সংসদের বাজেট অধিবেশনকে সামনে রেখে কঠোর সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে। অধিবেশনে স্বাস্থ্যবিধি শতভাগ অনুসরণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ৯০ জনের বেশি এমপি যেন সংসদে উপস্থিত না হন সে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এজন্য অধিবেশন কক্ষে দুই সিট পরপর একজন এমপির বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে। ওই সিট প্ল্যান অনুযায়ী এমপিদের তালিকা তৈরি করে তাদের রোববার থেকে চিঠি পাঠানো হবে। তালিকার বাইরে আর যেনো কোন এমপি উপস্থিত না থাকেন সে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, এছাড়া যারা বিভিন্ন জটিল রোগে অসুস্থ কিংবা জ্বর ও কাশি রয়েছে তাদেরকে অধিবেশনে যোগ না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। প্রতিদিন সর্বোচ্চ তিন ঘন্টা বাজেট অধিবেশন বসবে। এদিকে মন্ত্রী ও এমপিদের পাশাপাশি সংসদ সচিবালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়েও বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সচিবালয়ে ১২শ কর্মকর্তা ও কর্মচারী থাকলেও অধিবেশনের সময় দায়িত্ব পালন করবেন সর্বোচ্চ দুই শতাধিক। যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে।
সংসদ সচিবালয় জানিয়েছে, সংসদ অধিবেশনে স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে ইতোমধ্যে সংসদ সচিবালয়ের প্রায় একশ জন কর্মকর্তা-কর্মচারীর করোনা পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাকিদেরও পরীক্ষা সম্পন্ন করা হবে। সংসদ ভবনের মেডিক্যাল সেন্টারের মাধ্যমে নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হচ্ছে। এই টেস্টে নেগেটিভ আসা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অধিবেশনে দায়িত্ব পালন করবেন। আর তারা যাতে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কোন ব্যক্তির সংস্পর্শে না যেতে পারে সে জন্যেই তাদের কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হবে।
এদিকে সংসদে প্রবেশের ক্ষেত্রে সকলের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। আর সকলকে ডিসইনফেকশন চেম্বার দিয়ে প্রবেশ করতে হবে। মূল ভবনে প্রবেশের ক্ষেত্রে থার্মাল স্ক্যানারে তাপমাত্রা মেপে নিতে হবে। আগামী ১১ জুন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল সংসদে ২০২০-২১ অর্থবছরের জন্য বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করবেন। এর আগে ১০ জুন বিকেল ৫টায় চলতি সংসদের অষ্টম (বাজেট) অধিবেশন শুরু হবে। ওই দিন বিকেল ৪টায় সংসদের কার্যউপদেষ্টা কমিটির বৈঠকে অধিবেশনের মেয়াদ ও কর্মসূচি চূড়ান্ত হবে। তবে করোনা পরিস্থিতির কারণে এবারের অধিবেশন খুবই সংক্ষিপ্ত হবে। যা ৭ থেকে ১০ দিন চলতে পারে। এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সংসদের সপ্তম অধিবেশন একদিনের জন্য বসেছিলো। ওই অধিবেশনে ৩৫০ এমপির মধ্যে ১৩৫ জন অংশ নিয়েছিলেন। নিয়মরক্ষার ওই অধিবেশনটি সোয়া ঘণ্টায় শেষ হয়। কিন্তু বাজেট অধিবেশনে তেমনটি করার সুযোগ নেই। কারণ প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনা শেষে ৩০ জুন তা পাসের রেওয়াজ রয়েছে। এবারের ব্যতিক্রমী এ অধিবেশনে থাকবে না মন্ত্রীদের কাছে করা এমপিদের প্রশ্ন। গণমাধ্যমের উপস্থিতিও থাকছে না। বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কুটনীতিক ও ভিআইপি আমন্ত্রিত অতিথিরাও থাকছেন না এবারের বাজেট অধিবেশনে।