গ্রীষ্মের প্রচণ্ড তাপে প্রাণ হাঁসফাঁস করতে থাকে। প্রাণ শীতল করতে ঠান্ডা কিছু খেতে মন চায়। কিন্তু সব ঠান্ডা খাবারই কি শরীর ও মন জুড়াতে সাহায্য করে? বেশিরভাগ ঠান্ডা পানীয়তে প্রচুর চিনি দেয়া থাকে যা স্বাস্থের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। তাই এই গরমে হাইড্রেটেড থাকার জন্য এবং কিছু স্বাস্থ্যকর এবং তাজা ফল খেতে পারেন।
গ্রীষ্মকাল হলো বছরের এমন একটি সময় যার জন্য আমরা সারা বছর অপেক্ষ করে থাকি। কারণ এই সময়ে এমনকিছু সুস্বাদু ফল পাওয়া যায় যা স্বাদ আর পুষ্টিতে অনন্য। গরমে সুস্থ থাকার জন্য হিট স্ট্রোক রোধ করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। গ্রীষ্মের ফলমূল গরমের কারণে শরীরের নানা সমস্যার উপশম করে। এসব ফল আবহাওয়ার কঠোরতা থেকে বাঁচিয়ে আপনার শরীরকে পর্যাপ্ত পুষ্টি দেয়। জেনে নিন কোন ফলগুলো খাবেন-
ফুটি
এটি গ্রীষ্মের আরেকটি তাজা ফল যা আপনার শরীরকে প্রচুর পরিমাণে হাইড্রেশন দেয়। এটি কাঁচা কিংবা জুস করে খাওয়া যায়। ফুটির শরবতও এই গরমে তরতাজা রাখতে সাহায্য করে। এটি কেবল স্বাদেই নয়, সুন্দর গঠন এবং আকর্ষণীয় গন্ধের জন্যও পরিচিত। ভিটামিন এ, ডি, বি -৬, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম এবং ডায়েটি ফাইবারের মতো পুষ্টিতে ভরপুর হলো ফুটি। এটি কেবল হাইড্রেটিং নয়, কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পেতেও সাহায্য করে। ফুটিতে উচ্চ ক্যারোটিনয়েডের উপস্থিতি ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করে। এছাড়াও এতে ভিটামিন সি থাকার কারণে তা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
তরমুজ
তরমুজ ছাড়া গ্রীষ্মকাল উপভোগ্য হয় না। তরমুজ গ্রীষ্মের তাপের মাঝে শীতলতা ছড়ানোর একটি অন্যতম ফল, প্রাণ জুড়াতে যার বিকল্প নেই। রং, স্বাদ, গন্ধ তো বটেই, তরমুজ গ্রীষ্মের অনন্য ফল কারণ এর প্রায় নব্বই ভাগই পানি। যা সত্যিকার অর্থেই তৃপ্তি মেটানোর পাশাপাশি শরীরকে হাইড্রেট করে তোলে। লাইকোপিন, ভিটামিন এ, বি ৬ এবং সি, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস এবং অ্যামাইনো অ্যাসিড জাতীয় পুষ্টিতে ভরা এই ফল। গ্রীষ্মে নিয়মিত তরমুজ খেলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি জোগানোর পাশাপাশি প্রচণ্ড গরমে শরীর সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
আম
এই ফলটি ছাড়া গ্রীষ্মের কল্পনা করা প্রায় অসম্ভব। আমলি কেবল মিষ্টি স্বাদের জন্যই নয় বরং এর পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্যের জন্যও পরিচিত। প্রোটিন, ভিটামিন এ, বি ৬, সি, আয়রন, ফোলেট, ম্যাগনেসিয়াম, রাইবোফ্লাভিন এবং ডায়েটি ফাইবার জাতীয় স্বাস্থ্য সমৃদ্ধকারী পুষ্টিতে ভরপুর এই ফল। আমে বিশটিরও বেশি ভিটামিন এবং খনিজ থাকে, যা একে সুপারফুড হিসেবে তৈরি করতে সহায়তা করে। ৩/৪ কাপ আম আপনার প্রতিদিনের ভিটামিন সি এর ৫০%, ভিটামিন এ এর ৮% এবং ভিটামিন বি ৬ এর ৮% সরবরাহ করে। আক্ষরিকভাবে আপনার তৃষ্ণা নিবারণের জন্য পাকা আম, আমের রস, আমের লাচ্ছির চেয়ে ভালো উপায় নেই। আম দিয়ে তৈরি করা যায় নানা স্বাদের শরবত, কুলফি, আইসক্রিম ইত্যাদি।
কলা
কলা অবশ্য সারাবছরই পাওয়া যায়। তবে এর পুষ্টিকর বৈশিষ্ট্যগুলো প্রখর তাপকে হার মানাতে এবং শরীরে হাইড্রেশনের স্বাস্থ্যকর ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য কাজ করে। কলা গ্রীষ্মের পানীয় এবং শরবত বা স্মুদি তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে। কলা খেলে তা টিস্যুগুলো সঙ্কুচিত করে তোলে, যা আরও বেশি পানি শোষণে সহায়তা করে শরীরকে শীতল রাখে। এছাড়া শক্তি বাড়াতে এবং পেশী শক্তিশালী করতে সাহায্য করে কলা। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। প্রোটিন, ফাইবার, কার্বোহাইড্রেট, পটাসিয়াম এবং ভিটামিন বি ৬, সি দিয়ে ভরপুর কলা। তাই এই গরমে শরীরকে ভেতর থেকে ঠান্ডা রাখতে কলা খান নিয়মিত।
বেল
বেল একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, যা শীতল বৈশিষ্ট্যের জন্য পরিচিত। গরমের কারণে সৃষ্ট পেটের অসুখ এবং অন্যান্য হজমজনিত সমস্যা দূর করতে এই গ্রীষ্মকালীন ফলটি একটি দুর্দান্ত প্রতিকার। এছাড়া উডেন আপেল হিসাবে পরিচিত বেল ডায়েটরি ফাইবারের একটি দুর্দান্ত উৎস, যা প্রাকৃতিক রেচক হিসাবে কাজ করে এবং হজমে উন্নতি করতে সাহায্য করে। এটি কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে মুক্তি দেয়। এর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।