অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রমে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মিশ্র প্রতিক্রিয়া’

করোনাকালীন অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়ন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা। কেউ কেউ অনলাইনে পাঠদান কার্যক্রমের প্রস্তুতি নিলেও শীর্ষপর্যায়ের অনেক বিশ্ববিদ্যালয় এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি হবে এবং পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উচ্চশিক্ষার মান কমে যাবে।

করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। গত ৩০ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে অনুষ্ঠিত এক সভায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে শিক্ষার কার্যক্রম শুরুর সিদ্ধান্ত হয়। এতে যোগ দেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরাও।

এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অনলাইনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেও অনেক পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় এখনও এ বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। এ নিয়ে ধন্দের মধ্যে আছেন শিক্ষার্থীরাও।

on-line-class

ইতোমধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইন শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা নিয়ে একটি জরিপ শুরু করেছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। সেখানে শিক্ষকরা তাদের মতামত দেবেন। তবে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যরা এটা নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন। কেউ বলছেন যাওয়া যাবে না। আবার কেউ বলছেন, যাওয়া সম্ভব। এটা নিয়ে অভ্যন্তরীণ আলোচনা চলছে। তবে এখনও কেউ অনলাইন কার্যক্রম শুরু করেননি বলে জানা গেছে।

এদিকে অনলাইন ক্লাস নিয়ে গত ১১ মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ভবন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের ডিনদের সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল মিটিং প্লাটফর্ম জুমের মাধ্যমে এক সভা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। সভায় করোনাভাইরাসজনিত পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস ও পরীক্ষা স্থগিত থাকায় শিক্ষার্থীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা নিরসনের উপায় ও করণীয় নিয়ে, বিশেষ করে অনলাইনে ক্লাস নেয়ার সম্ভাব্যতা নিয়ে আলোচনা হয়।

on-line-class

এছাড়া অনেক শিক্ষার্থীর অর্থনৈতিক অস্বচ্ছলতা, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। এমন অবস্থায় এখনই ঢাবিতে অনলাইনে ক্লাস নেয়া সম্ভব হবে না বলে সভায় অভিমত ব্যক্ত করা হয়। তবে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ছুটির পর প্রয়োজনে শুক্র ও শনিবারও ক্লাস নেয়ার বিষয়ে একমত হন সবাই।

অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম প্রসঙ্গে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ এ প্রসঙ্গে জানান, আমাদের গত সেমিস্টারের বেশি ক্লাস বাকি নেই। সেগুলো কীভাবে সম্পন্ন করা যায় সেটি নিয়ে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। আমাদের অনলাইন কার্যক্রমের সক্ষমতা আছে। শিক্ষার্থীদেরও আর্থিক সাপোর্ট দেয়ার চিন্তাভাবনা আছে। তবে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি।

কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. লুৎফুল হাসান বলেন, আমাদের থিওরিক্যাল ক্লাস অনলাইনে নেয়া যাবে। তবে বিভিন্ন গ্রামাঞ্চলের শিক্ষার্থীদের কত ভাগ এর মধ্যে সংযুক্ত করা যাবে সেটি নিশ্চিত নয়। তাছাড়া প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস অনলাইনে নেয়ার সুযোগ নেই। এটি নিয়ে আমাদের ডিন, বিভাগীয় চেয়াম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে মিটিং হয়েছে। সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

on-line-class

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও তাদের বিভাগীয় চেয়ারম্যান, অনুষদের ডিনদের মতামতের অপেক্ষায় আছেন বলে জানা গেছে।

জানতে চাইলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মীজানুর রহমান বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি কোর্স অনলাইনে পরিচালনার সক্ষমতা আমাদের হয়নি। দেশের এমন পরিস্থিতিতে আমাদের প্রস্তুতি ও পরিবেশ কোনোটাই নেই। এ কারণে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নের কোনো ইচ্ছা বা আগ্রহ আমাদের নেই।

তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশের ইন্টারনেট এখনও তেমন দ্রুতগতির নয় যে দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে ক্লাস করতে পারবে। বরং এটি শুরু করলে এক ধরনের বৈষম্য সৃষ্টি হবে। একজন যদি ক্লাস থেকে বঞ্চিত হয় সেজন্য নতুন করে আবারও ক্লাস নিতে হবে। যাদের ব্যবসা ও মুনাফা কমে যাচ্ছে তারা অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে পারে, আমরা এর আওতায় আসতে রাজি নই।

on-line-class

পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রমের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, সরকার যদি স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অনলাইনভিত্তিক করার অনুমতি দেয় তবে আমাদের দেশে শিক্ষা ব্যবস্থায় ধস নামবে। বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশে এসে পড়ার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেটের গ্রহণযোগ্যতা কমে যাবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার নূর আহমেদ বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত ২৮ হাজার শিক্ষার্থীর মধ্যে অধিকাংশই গ্রামের বাড়িতে। সেসব স্থানে ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করা যাচ্ছে না। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে অনেকে মানবেতর জীবনযাপন করছে। হলে থেকে টিউশনি করে চলত এমন সাত হাজার শিক্ষার্থী আর্থিক সহায়তার জন্য আবেদন করেছে।

on-line-class

তিনি বলেন, এসব বিষয় বিবেচনা করে অনলাইনে শিক্ষা কার্যক্রম চালু না করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সকলকে এই সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হবে না বলেই অনলাইন কার্যক্রম বাস্তবায়ন থেকে আমরা সরে এসেছি।

তিনি আরও বলেন, অনির্ধারিত ছুটি পুষিয়ে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাপ্তাহিক ছুটি, রুটিন ছুটি বাতিল করে ক্লাস সিডিউল বাড়িয়ে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার একটি প্রস্তাবনা তৈরি করেছে এই কমিটি। এই প্রস্তাবনা বাস্তবায়নের মাধ্যমে সেশনজট নিরসনে চেষ্টা করা হবে।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন