আসন্ন কোরবানি উপলক্ষে গরু মোটাতাজাকরণ করছেন খামারিরা। তবে বর্তমাতে গো-খাদ্যের উচ্চমূল্যের কারণে দেশের প্রায় ৬ লাখ খামারি দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। তারা বলছেন, গরুর খাদ্যের এত দাম আর কখনই দেখেননি তারা। গো-খাদ্যের দাম না কমলে তাদের বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে প্রতিবছর দেশের খামারিরা গরু, ছাগল, ভেড়া মোটাতাজাকরণ করে থাকেন। তবে দিন যতই যাচ্ছে গো-খাদ্যের দাম ততই বাড়ছে। এতে করে খামারিদের খরচও বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর ওপর হানা দিয়েছে করোনাভাইরাস। তাদের শঙ্কা, করোনা পরিস্থিতি যদি ঈদুল আজহা পর্যন্ত স্থায়ী হয় তাহলে গরু বেচাকেনা হবে না। সে ক্ষেত্রে বড় ধরনের লোকসানের মুখে পড়তে হবে তাদের।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতর সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে দেশে খামারের সংখ্যা ছিল ৪ লাখ ৪২ হাজার ৯৯১টি। ২০১৯ সালে গরুর খামারের সংখ্যা ছিল ৫ লাখ ৭৭হাজার ৪১৬টি। এবার এ সংখ্যা আরও বেড়েছে বলে জানা গেছে।
গত তিন বছর ধরে আমাদের দেশি পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটানো হচ্ছে। গত বছর কোরবানিযোগ্য পশুর সংখ্যা ছিল প্রায় ১ কোটি ১৮ লাখ। এরমধ্যে ৪৫ লাখ ৮২ হাজার গরু-মহিষ, ৭২ লাখ ছাগল-ভেড়া এবং ৬ হাজার ৫৬৩টি অন্যান্য পশু। কোরবানিতে পশু জবাই করা হয়েছিল ১ কোটি ৬ লাখ। গত বছরে প্রস্তুতকৃত প্রায় ১২ লাখ পশু অবিক্রিত থেকে যায়।
প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, এবারও নিজেদের পশু দিয়েই কোরবানির চাহিদা মিটানো যাবে। এজন্য বাইরের কোনো দেশের ওপর নির্ভর করতে হবে না।
ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে এবার ৫৮টি গরু লালন-পালন করে করোনা নিয়ে খুব আতঙ্কের মধ্যে আছেন মামুন। করোনার কারণে বেলকুচি উপজেলায় ভেটেরিনারি চিকিৎসক নেই। চিকিৎসক না থাকায় তার ৬৫ হাজার টাকা দামের একটি গরু মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে। এ কারণে খুব অস্বস্তির মধ্যে আছেন তিনি। খামারি মামুন বললেন, খাবারের দাম বৃদ্ধি এবং করোনার চলমান পরিস্থিতি যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আমার ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা লস হবে। দুঃখ করে তিনি বলেন, এইবার যদি লস হয় আর গরুর ব্যবসা করব না।
শেরপুর জেলার আরেক খামারি তৌহিদুর রহমান পাপ্পু। তিনিও জানালেন, প্রতিনিয়ত গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাচ্ছে। এই বাড়তি মূল্যে খাবার কিনতে কৃষক হিমশিম খাচ্ছে। তিনি বলেন, কোরবানিতে ৩-৪ লাখ টাকায় বিক্রির আশায় ভালো ভালো খাওয়া দিয়ে গরু পালন করি। যদি সেগুলো কোরবানিতে বিক্রি না হয় তাহলে আমাদের প্রচুর লস হয়। সেই লস পুষিয়ে ওঠা কঠিন হয়। এই অবস্থায় অনেকে চালান হারিয়ে এ ব্যবসা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন বলে জানান এই খামারি।
বগুড়া জেলার উল্লাপাড়া গ্রামের খামারি হবিবর রহমান (হবি) বলেন, গো-খাদ্যের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে তাতে আমাদের মতো ছোটখাট খামারিদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে গেল। তিনি বলেন, এক লিটার দুধ বিক্রি করে এক কেজি ভূষির দাম হয় না। এর আগে করোনা শুরুর সময় দুই কেজি দুধ বিক্রি করে এক কেজি ভূষি কিনতে হয়েছে। এখন রোজার কারণে দুধের দাম কিছুটা বেড়েছে। রোজা চলে যাওয়ার পর কি হবে তা জানি না।
এ বিষয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. আবদুল জব্বার শিকদার বলেন, সারাবিশ্বে বর্তমানে যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে আমরাও সে পরিস্থিতির শিকার। তিনি বলেন, গরুর খাদ্য সমস্যা সমাধানের জন্য নানা জাতের ঘাস উদ্ভাবন করা হয়েছে। দানাদার খাদ্যের ওপর বেশি জোর না দিয়ে ঘাসের ওপর নির্ভর করার জন্য তিনি খামারিদের প্রতি আহ্বান জানান।