খবর পড়তে গেলে জানা যায় কোনো না কোনো জেলায় বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বজ্রপাত বেড়েছে অস্বাভাবিক হারে। একই সঙ্গে মৃত্যুর হারও বেড়েছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের এক গবেষণা মতে, বিগত আট বছরে বজ্রপাতের ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে প্রায় ১৮,০০ এর অধিক মানুষ। এর মধ্যে ২০১২ সালে মারা গেছে সর্বাধিক, ৩০১ জন!
পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির কারণেই এমন অস্বাভাবিক বজ্রপাত হচ্ছে মর্মে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। বাতাসের মাধ্যমে ঘন কালো মেঘ এবং মাটিতে থাকা নেগেটিভ ও পজেটিভ চার্জে পরিবাহী হওয়া, বনাঞ্চল উজাড় করা, জলবায়ুর পরিবর্তন, জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, অত্যধিক শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্রের ব্যবহার ও গ্রিন হাউজ গ্যাসের নির্গমন বৃদ্ধিকে বজ্রপাতের কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন বিজ্ঞানীরা।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে আপনার করণীয়ঃ
পাঠক, বজ্রপাত থেকে বাঁচার সবচেয়ে বড় উপায় হলো সচেতনতা। যখনই গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির সঙ্গে মেঘের গর্জন হবে তখন নিরাপদ আশ্রয়ে চলে যেতে হবে। আমাদের দেশের মানুষের মধ্যে বজ্রপাতের সময় মাঠে কাজে যায়, নদীতে মাছ ধরতে যায়, গরু আনতে মাঠে যায় আবার বাচ্চারা খেলতে যায়। এটা মোটেও করা যাবে না। সারা দেশে যদি এই সচেতনতা করে তোলা সম্ভব হয় তাহলে বজ্রপাতের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।
বজ্রপাত থেকে বাঁচতে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর ২০টি জরুরি নির্দেশনা দিয়েছে। যা পাঠককে সচেতন করতে নির্দেশনাগুলো নিম্নে তুলে ধরছি-
নির্দেশনাগুলো হলো-
১. বজ্রপাতের ও ঝড়ের সময় বাড়ির ধাতব কল, সিঁড়ির ধাতব রেলিং, পাইপ ইত্যাদি স্পর্শ করবেন না।
২. প্রতিটি বিল্ডিংয়ে বজ্র নিরোধক দণ্ড স্থাপন নিশ্চিত করুন।
৩. খোলাস্থানে অনেকে একত্রে থাকাকালীন বজ্রপাত শুরু হলে প্রত্যেকে ৫০ থেকে ১০০ ফুট দূরে দূরে সরে যান।
৪. কোনো বাড়িতে যদি পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকে তাহলে সবাই এক কক্ষে না থেকে আলাদা আলাদা কক্ষে যান।
৫. খোলা জায়গায় কোনো বড় গাছের নিচে আশ্রয় নেয়া যাবে না। গাছ থেকে চার মিটার দূরে থাকতে হবে।
৬. ছেঁড়া বৈদ্যুতিক তার থেকে দূরে থাকতে হবে। বৈদ্যুতিক তারের নিচ থেকে নিরাপদ দূরত্বে থাকতে হবে।
৭. ক্ষয়ক্ষতি কমানোর জন্য বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতির প্লাগগুলো লাইন থেকে বিচ্ছিন্ন রাখতে হবে।
৮. বজ্রপাতে আহতদের বৈদ্যুতিক শকের মতো করেই চিকিৎসা দিতে হবে।
৯. এপ্রিল-জুন মাসে বজ্রপাত বেশি হয়। এই সময়ে আকাশে মেঘ দেখা গেলে ঘরে অবস্থান করুন।
১০. যত দ্রুত সম্ভব দালান বা কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
১১. বজ্রপাতের সময় বাড়িতে থাকলে জানালার কাছাকাছি বা বারান্দায় থাকবেন না এবং ঘরের ভেতরে বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম থেকে দূরে থাকুন।
১২. ঘন-কালো মেঘ দেখা গেলে অতি জরুরি প্রয়োজনে রাবারের জুতা পরে বাইরে বের হতে পারেন।
১৩. উঁচু গাছপালা, বৈদ্যুতিক খুঁটি, তার, ধাতব খুঁটি ও মোবাইল টাওয়ার ইত্যাদি থেকে দূরে থাকুন।
১৪. বজ্রপাতের সময় জরুরি প্রয়োজনে প্লাস্টিক বা কাঠের হাতলযুক্ত ছাতা ব্যবহার করুন।
১৫. বজ্রপাতের সময় খোলা জায়গা, মাঠ বা উঁচু স্থানে থাকবেন না।
১৬. কালো মেঘ দেখা দিলে নদী, পুকুর, ডোবা, জলাশয় থেকে দূরে থাকুন।
১৭. বজ্রপাতের সময় শিশুদের খোলা মাঠে খেলাধুলা থেকে বিরত রাখুন এবং নিজেরাও বিরত থাকুন।
১৮. বজ্রপাতের সময় খোলা মাঠে থাকলে পায়ের আঙুলের ওপর ভর দিয়ে এবং কানে আঙুল দিয়ে মাথা নিচু করে বসে পড়ুন।
১৯. বজ্রপাতের সময় গাড়ির মধ্যে অবস্থান করলে, গাড়ির থাতব অংশের সঙ্গে শরীরের সংযোগ ঘটাবেন না। সম্ভব হলে গাড়িটিকে নিয়ে কোনো কংক্রিটের ছাউনির নিচে আশ্রয় নিন।
২০. বজ্রপাতের সময় মাছ ধরা বন্ধ রেখে নৌকার ছাউনির নিচে অবস্থান করুন।
ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ –
মোঃ আব্দুর রহমান খান গণমাধ্যমের এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “এপ্রিল ও মে মাসে সবচেয়ে বেশি কালবৈশাখী হয়ে থাকে। আমাদের দেশে এই দুই মাসে ঝড়, বজ্রপাত ও বৃষ্টি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। এখন ঝড়, বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি এবং বজ্রপাত হবে।
বার্তা প্রেরক
মোঃ জহিরুল ইসলাম
কক্সবাজার(পেকুয়া)প্রতিনিধি