১২ মে আকাশে উদিত হবে সুরাইয়া তারকা। মূলত আকাশে একটা তারকাপুঞ্জ আছে, যার আরবি নাম সুরাইয়া। বাংলায় বলা হয় কৃত্তিকা। ইংরেজিতে এটিকে Pleiades বলা হলেও সেভেন সিস্টারস নামেই মানুষ বেশি চেনে। এই তারকাপুঞ্জে এক হাজারের অধিক তারকা থাকলেও খালি চোখে সাতটি তারকা একসঙ্গে দেখা যায়।
এই তারকা উদিত হলে হলে করোনাসহ সব রোগব্যাধি বিদায় নেবে, রাসূল (সা.) এর একটি হাদীসের ভুল ব্যাখ্যাকে ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে এমন একটি গুজব।
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তারাটি উঠবে, তখন প্রতিটি শহরবাসী থেকে রোগব্যাধি উঠিয়ে নেয়া হবে’।
এ হাদীসকে দূর্বল হিসেবে অভিহিত করেছেন বেশিরভাগ মুহাদ্দিস। যা কোন বিষয়ে প্রমাণ হতে পারে না। দ্বিতীয়ত এ হাদীসের ব্যাখ্যা খুঁজতে গিয়ে হাদীসের ইমামরা আরো কিছু হাদীস খুঁজে পান।
যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে উমর বলেছেন, ‘মহানবী (সা.) ব্যাধি চলে যাওয়ার আগে ফল বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন’। বর্ণনাকারী উসমান বলেন, আমি ইবনে উমারের কাছে জিজ্ঞেস করলাম, কখন যাবে সেই ব্যাধি। তিনি বললেন, ওটা সুরাইয়া তারকাপুঞ্জ উদয়ের পর।
আরেক হাদীসে হযরত জাবের (রা.) বলেন যে, ‘রাসূল (স.) ফল পাকার আগে (অর্থাৎ খারাপ আবহাওয়া হতে মুক্ত না হওয়া পর্যন্ত) বিক্রি করতে নিষেধ করেছেন।’
রাসূল (সা.)এর হাদীসটি নিয়ে ইসলামী গবেষক শায়েখ ড. আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়া বলেন, ‘মূলত মে মাসে ফজরের আগে সুরাইয়া তারকা উঠবে এ হাদীস আরব দেশের সঙ্গে সম্পর্কিত, তাদের ফলফলাদি রোগব্যাধি মুক্ত হওয়ার সঙ্গে সম্পর্কিত। এর সঙ্গে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। কিন্তু এর সঙ্গে যারা করোনাভাইরাস জুড়ে দিয়েছেন তারা পুরোপুরি মিথ্যাচার করছেন। সব মুহাদ্দিসিই বলেছেন এ হাদীসটি ফলফলাদির সঙ্গে সম্পর্কিত। এটাকে করোনা বা মানুষের রোগব্যাধির সঙ্গে যুক্ত করলে তা শিরক হয়ে যাবে। সুতরাং এ ধরণের মিথ্যাচার থেকে আমাদের বিরত থাকা উচিত।’
হাদীসের গবেষকদের মতে, আরব পঞ্জিকায় শীতকাল শুরু হয় ইংরেজির অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে। ওই সময়ে সুরাইয়া নামের এই নক্ষত্রপুঞ্জ সন্ধ্যার পর উদয় হতে থাকে। রাত গভীর হলে এই তারা খুব সহজে দেখা যায়।এভাবে আস্তে আস্তে সূর্য তার উদয়স্থল পরিবর্তন করে উত্তর গোলার্ধের দিকে সরতে থাকে, ফলে গাছে গাছে অংকুরোদ্গম হতে থাকে। আর ভাইরাসের সংক্রমনও বাড়তে থাকে সমান্তরালে।
এভাবে চলতে চলতে এপ্রিল আসার পর সূর্য আরব অঞ্চলে মোটামুটি জোর পায়। সুরাইয়ার উদয় হয় তখন শেষ রাতে। এই ভাবে মে মাসের ১২ তারিখের দিকে তার উদয় আসে ফজরের পর। এই সময় আরব দেশে মারাত্মক গরম শুরু হয়। উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধে শুরু হয় উষ্ণতার আবহ। ফলে পরিবেশ হয়ে ওঠে অনেকটা ভাইরাস মুক্ত।যা প্রত্যেক বছরেই হয়ে থাকে।
এই হাদীসে সেটাই বোঝানো হয়েছে। আর রাসূল (সা.) মে মাসে সুরাইয়ার উদয়কে ফসল সুন্দর হবার ক্ষণ হিসেবে নির্ধারণ করেছেন। ঐ সময় খেজুর বিক্রির জন্য ভাল, কারণ খেজুরে কোন ব্যাধি ও শষ্যে কোন পোকা থাকেনা।