লকডাউনে পারিবারিক অশান্তি ও দাম্পত্য কলহ বাড়ছে

বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়া করোনাভাইরাসের কারণে জীবন বিপর্যস্ত। চলছে লকডাউন। থাকতে চার দেয়ালের মাঝে। প্রয়োজন ছাড়া বন্ধ বাইরে যাওয়া। ধৈর্য আর সচেতনতার মাধ্যমে মোকাবিলা করতে হচ্ছে এই ‘যুদ্ধ’। এদিকে লকডাউনের কারণে দীর্ঘ সময় ঘরে থাকায় একদিকে যেমন বাড়ছে পারিবারিক অশান্তি তেমনই বাড়ছে দাম্পত্য কলহ। শুধু মহিলারাই নয়, হিংসার শিকার হচ্ছে বাড়ির ছোটরাও।

করোনাভাইরাসের জন্য বিশ্বজুড়ে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে চলেছে। যেমন চীনের কথাই ধরা যাক। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিগত মাসে দেশটি প্রত্যক্ষ করেছে সর্বোচ্চ বিবাহবিচ্ছেদের ঘটনা। আর তুরস্কের দিকে তাকালেও ঠিক একই ধরনের চিত্র ফুটে উঠে।

ডিভোর্স আইনজীবীদের তথ্যানুযায়ী, লকডাউনের পর থেকে দেশটিতে বিবাহবিচ্ছেদের সংখ্যা প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। দুবাইয়েও এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে খবরে প্রকাশ পেয়েছে।

পারিবারিক অশান্তি বাড়ছে সেইসব পরিবারে যারা নিউক্লিয়াস ফ্যামিলি হিসাবে পরিচিত তাদের মধ্যে। এদের মধ্যে একটা অংশ আছেন যারা স্বামী এবং স্ত্রী উভয়ে চাকরি করেন এখন লকডাউনের কারণে বাড়িতে। যদি কোনও কারণে দুজনের মধ্যে মনোমালিন্য আগে থেকেই থাকে সেই অশান্তি আরও বেড়ে যাচ্ছে। ছোট ঘটনাও বড় পারিবারিক অশান্তি রূপ নিতেও দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন মনোবিদরা। এরমধ্যে টিভি দেখা কিংবা গান শোনা নিয়ে অশান্তি, স্যোশাল মিডিয়া বেশিক্ষণ সময় দেয়া নিয়েও স্বামী সঙ্গে স্ত্রীর অশান্তি লেগে যাচ্ছে।

পাশাপাশি অনেক পরিবারে স্বামীরাই শুধু কাজে বের হন, স্ত্রী’রা বাড়িতে থাকেন। এই ধরনের পরিবারের সংখ্যা আমাদের সমাজে এখনও বেশি। এখানে দেখা যাচ্ছে একজন মহিলার কাছে ঘরে থাকাটা তার ওপর সেভাবে চাপ না বাড়ালেও, একজন চাকুরিজীবী পুরুষের কাছে কিন্তু সারাক্ষণ বাড়িতে বসে থাকা অনেক বেশি ফ্রাস্ট্রেশনের জন্ম দিচ্ছে। এবার সেই ফ্রাস্ট্রেশন অনেক সময় রাগে পরিণত হচ্ছে। সেই ফ্রাস্ট্রেশন প্রকাশের জায়গা হচ্ছে স্ত্রী বা পরিবার। কাজেই বাড়ছে অশান্তি।’

বিশেষজ্ঞদের মতে, এমন একটি উদ্বেগপূর্ণ পরিস্থিতিতে দেখা যাচ্ছে, পরিবারের কেউ না কেউ হচ্ছেন চাকরিহারা আর পাশাপাশি রয়েছে সংসার চালানো এবং সন্তানদের দেখাশোনার ভার। সবকিছু মিলে নাগরিক জীবনে জমে উঠছে মান-অভিমান আর তারই ফলাফল বাড়ছে বিবাহবিচ্ছেদের হার!

দম্পতিদের মধ্যে ছোটখাটো অমিল হতেই পারে। কিন্তু ছোটখাটো অমিল আর বিবাহবিচ্ছেদের আলোচনার মধ্যে অনেক বড় পার্থক্য রয়েছে। করোনার প্রভাব অন্যান্য আরও অনেক কিছুর মতো এই বিষয়টিকেও করে দিচ্ছে ওলটপালট।

নিউইয়র্ক শহরের ডিভোর্স আইনজীবী টড এ. স্পডেক বলেন, কোনো সন্দেহ নেই যে, বিবাহবিচ্ছেদের বড় একটি ঢেউ আসবে। কেননা বিগত কয়েকদিন ধরেই তিনি প্রচুর কল পাচ্ছেন। যে ফোনকলগুলোর সবকটিই ছিল দাম্পত্য কলহের। তার মতে, কর্মব্যস্ত জীবনে কলহগুলো মানুষ ভুলে যায়, তবে এখন যেহেতু সার্বক্ষণিক একসঙ্গে থাকতে হচ্ছে তাই বিরূপ মনোভাব তো কমছেই না বরং আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে।

তবে বেশ কয়েকটি সংস্থার মতে, ইতোপূর্বে যে সম্পর্কগুলোতে বিচ্ছেদের সুর বইছিল, সেই সম্পর্কগুলো এখন দীর্ঘ সময় একসঙ্গে কাটানোর ফলে পুনরায় জোড়া লেগে যাচ্ছে। আর তাই অনেকেই আগে ডিভোর্স কেস ফাইল করলেও, এখন সেগুলো তুলে নেয়ার জন্য প্রায়শই কল করছেন।

আর তাই এমন পরিস্থিতিতে সবার উচিত নিজেদের কলহগুলোকে আরেকটি বার সুযোগ দিয়ে সঙ্গী অথবা সঙ্গিনীর সাথে আরেকটু অন্তরঙ্গ সময় অতিবাহিত করা। ছোটখাটো উচ্ছ্বাস এবং আবেগগুলোকে আঁকড়ে ধরে একে অপরের মধ্যে বিবাদ না খুঁজে বরং সুখ খুঁজে নেয়া। আর অপেক্ষা করা, কেননা মেঘের কালো ছায়া একদিন সরে যাবেই। নতুন ভোর করোনা আতঙ্ক ধুয়ে মুছে নাগরিক জীবনের দাম্পত্যগুলোকে দিবে নতুন রূপ। খবর যুগশঙ্খ, ইন্ডিয়া টাইমস, জি নিউজ।

প্রসঙ্গত, গত ডিসেম্বরে চীনের উহানে করোনাভাইরাসের উৎপত্তি হয়। এখন পর্যন্ত এই ভাইরাসের প্রতিষেধক তৈরি করা যায়নি।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এ রোগকে কোভিড-১৯ নামকরণ করে গত ১১ ফেব্রুয়ারি এবং কোভিড-১৯ মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেয় ১১ মার্চ।

মন্তব্য করুনঃ

আপনার মন্তব্য লিখুন!
এখানে আপনার নাম লিখুন