প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস সংক্রমণে বিশ্বজুড়ে মৃতের সংখ্যা উননব্বই হাজার ছাড়িয়ে গেছে। আক্রান্তের সংখ্যাও থেমে নেই। প্রতিদিনই হাজার হাজার কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হচ্ছে। মারণ এই রোগটির ছোবল থেকে রক্ষা পেতে আমরা যথাসম্ভব সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞদের স্বাস্থ্য পরামর্শ মেনে চলার চেষ্টা করছি। কিন্তু তারপরও আমাদের কারও কারও মধ্যে এমনকিছু বাজে ছোট ছোট অভ্যাস রয়েছে, যা ভাইরাসটিতে সংক্রমণের ঝুঁকি খুব দ্রুতই বাড়িয়ে দিচ্ছে। এই বাজে অভ্যাসের লাগাম টেনে ধরার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে।
এখানে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়িয়ে তোলে এমনকিছু বাজে অভ্যাস উল্লেখ করা হলো-নখ কামড়ানো
এতে জীবাণু সরাসরি হাত থেকে মুখে চলে যেতে পারে। নখ কামড়ালে সমস্যা কোথায় অথবা কেন নখ কামড়ানো যাবে না। এ প্রসঙ্গে জি৪ বাই গোলপার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ডেন্টাল সার্জন মাইক গোলপা বলেন, ‘নখের অগ্রভাগের নিচে সকল ধরনের জীবাণু থাকে। প্রকৃতপক্ষে, এটি হচ্ছে জীবাণুর জন্য আদর্শ বা আরামদায়ক জায়গা। আধোয়া হাতে নখ কামড়ালে বিভিন্ন ধরনের ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস সংক্রমণের উচ্চ ঝুঁকি রয়েছে।’ আপনার নখ কামড়ানোর অভ্যাস থাকলে ধরে নিন যে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের বাড়তি ঝুঁকিতে রয়েছেন।ব্রণ খুঁটানো
অনেকেরই মুখে পিম্পলের সমস্যা থাকে। এই মহামারিতে যেহেতু প্রয়োজন অনুসারে ত্বকের সেবা নিতে চর্মরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যেতে পারছেন না, কিন্তু তাই বলে ত্বকের সকল সমস্যায় নিজের হাত ব্যবহার করতে যাবেন না। ব্রণ হচ্ছে ত্বকের এমন একটি সমস্যা যেটা মুখমণ্ডল স্পর্শের হার বাড়িয়ে তোলে। এই অবস্থায় ভুলেও ব্রণ খুঁটাবেন না। নখেই বাসা বেঁধে থাকতে পারে মারণ করোনাভাইরাস। প্রকৃতপক্ষে, ব্রণ খুঁটানোর প্রবণতা দমিয়ে রাখা সহজ কাজ নয়। ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যান্টি-অ্যাজিং ও ফাংশনাল মেডিসিন ফিজিশিয়ান ইয়েরাল প্যাটেল মহামারির সময় ত্বক না খুঁটতে সতর্ক করেছেন, কারণ এটি স্বাস্থ্যকে মারাত্মক ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। তিনি বলেন, ‘ভাইরাসযুক্ত জিনিস স্পর্শের পর মুখমণ্ডল ধরলে মুখ, চোখ ও নাকের মাধ্যমে শরীরে সহজে ভাইরাস প্রবেশ করতে পারে।’চুল পাকানো
মেয়েদের মধ্যে চুল পাকানো বা স্পর্শের প্রবণতা বেশি। এতে চুল ভেঙে যায় বলে হেয়ারড্রেসাররা চান না যে মেয়েদের এই বাজে অভ্যাসটি প্রচলিত থাকুক। কিন্তু শুধু চুলের সৌন্দর্য রক্ষা করা নয়, তবে এই সময় এই অভ্যাস একদম বদলে ফেলুন। কারণটি হলো, ভাইরাসযুক্ত হাতে চুল ধরলে চুলে লেগে থাকা ভাইরাস নাক, চোখ ও মুখের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করতে পারে।’ তাই কোভিড-১৯ থেকে সুরক্ষিত থাকতে এই অভ্যাসটিও বর্জন করতে হবে।বিছানার চাদর না ধোয়া
অনেকেরই অভ্যাস দু সপ্তাহে একবার বেডশিট বা চাদর না ধোয়ার। কিন্তু এটা এখন করা যাবে না অন্তত দুই থেকে তিন বার এক সপ্তাহেই বিছানার চাদর ধুয়ে ফেলতে হবে। নতুন করোনাভাইসটি বিভিন্ন পৃষ্ঠে কয়েকদিন পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে বলে শরীরের সংস্পর্শে আসা যেকোনও কিছু ধোয়ার হার বৃদ্ধি করা উচিত। বিছানার চাদর ও বালিশের কভারের ক্ষেত্রে এই পরামর্শ বিশেষভাবে প্রযোজ্য। ডা. প্যাটেল বলেন, ‘যারা এক বা দুই সপ্তাহ পরপর বিছানার চাদর, বালিশের কভার ও তোয়ালে ধুয়ে থাকেন, তারা যেন এই মহামারির সময় প্রতিসপ্তাহে অন্তত ২-৩ বার ধোয়ার চেষ্টা করেন।বাথরুমের কাউন্টারটপে টুথব্রাশ রাখা দাঁতকে ঝকঝকে সাদা করার ক্ষেত্রে টুথব্রাশের অবদান অনস্বীকার্য, কিন্তু সতর্ক না থাকলে এটি আপনাকে অসুস্থও করতে পারে। ওয়াশ বেসিন যদি টয়লেটের মধ্যে থাকে তাহলে সেখানে টুথ ব্রাশ রাখবেন না। অথরিটি ডেন্টালের পরিচালক ডা. হেনরি হ্যাকনি বলেন, ‘টুথব্রাশে লালা ও রক্ত লেগে থাকতে পারে, যেখানে ভাইরাসের উপস্থিতিও থাকতে পারে।’ পরিবারের সদস্যরা যে কাউন্টারটপে টুথপেস্ট রাখেন সেখানে আপনার টুথপেস্ট রাখলে নতুন করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে থাকবেন, কারণ তাদের শরীরে ভাইরাসটি আছে কি নেই আপনি জানেন না। ঠিক তেমনি পরিবারের সদস্যরাও ঝুঁকিতে থাকেন, কারণ তারাও জানেন না যে আপনি সংক্রমিত হয়েছেন কিনা। তাই পরিবারের মধ্যে কোভিড-19 এর ঝুঁকি এড়াতে প্রত্যেকের টুথব্রাশ আলাদা স্থানে খাড়াভাবে রাখুন।দাঁত খুঁটানোনখ কামড়ানোর মতো আরেকটি বদভ্যাস হচ্ছে দাঁত খুঁটানো। এতে আঙুলে লেগে থাকা ভাইরাস অতি সহজেই শরীরে প্রবেশ করতে পারে। ডা. হ্যাকনি বলেন, ‘হাতে কতরকম ভাইরাস বা জীবাণু লেগে রয়েছে আপনি চোখে দেখতে পান। তাই এই মহামারিতে কোভিড-19 এর ঝুঁকি বাড়াতে না চাইলে অপ্রয়োজনে দাঁত খুঁটানোর তাড়না প্রতিহত করুন। নিতান্ত প্রয়োজনে দাঁত স্পর্শের প্রয়োজন হলে আগে সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিন। দাঁত স্পর্শের পরও হাত ধুয়ে নিতে হবে।’
দাঁতের ফাঁকে অনেক সময় খাবার আটকে থাকলে সেটা আঙুল দিয়ে বার করে থাকা হয়, কিন্তু সেটা এখন একেবারেই করবেন না৷ দাঁতের ফাঁকে অনেক সময় খাবার আটকে থাকলে সেটা আঙুল দিয়ে বার করে থাকা হয়, কিন্তু সেটা এখন একেবারেই করবেন না৷ দাঁতের ফাঁকে অনেক সময় খাবার আটকে থাকলে সেটা আঙুল দিয়ে বার করে থাকা হয়, কিন্তু সেটা এখন একেবারেই করবেন না৷খাবার শেয়ার করাকরোনা মহামারির এই সময়টি রোমান্টিক ভোজনের সময় নয়। কারণ বাসন ও খাবার খাওয়ার উপকরণের মাধ্যমে ভাইরাসটি সহজে ছড়াতে পারে। খাবার শেয়ার করে এই সময় একেবারেই খাবেন না। পরিবারের ব্যক্তিদের সঙ্গেও এই কাজ করবেন না। ডা. হ্যাকনির পরামর্শ হচ্ছে, ‘খাবার, পানীয়, খাবার খাওয়ার উপকরণ, পানীয়ের পাত্র, ডিশ, গ্লাস, কাপ, চামচ ও স্ট্র শেয়ার করবেন না।’সূত্র: বেস্ট লাইফ